ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ছাড় নয়: মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন খামেনি

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৭:৪৭, ৪ জুন ২০২৫

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ছাড় নয়: মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন খামেনি

ছবি: সংগৃহীত।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না। তিনি বলেছেন, এটি ইরানের জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের অন্যতম প্রধান উপাদান। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পারমাণবিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ বা সীমিতকরণের শর্তে তেহরানের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

বুধবার (৪ জুন), ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির ১৯৮৯ সালের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক ভাষণে খামেনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব আমাদের জাতির আত্মনির্ভরশীলতার চেতনা এবং ‘আমরা পারি’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার অর্থ হলো আমেরিকার কিংবা আমেরিকার মতো দেশের সবুজ সংকেতের অপেক্ষা না করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেই নেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাব ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের আদর্শের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে।”

খামেনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি “একশ ভাগ অন্যায্য”, এবং ইরান নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ওয়াশিংটনের অনুমতির অপেক্ষা করবে না।

তিনি বলেন, “কেউ কেউ মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে মাথানত করাই যুক্তিবাদিতা, অথচ এটা যুক্তিবাদ নয়। আপনারা কেন হস্তক্ষেপ করছেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে কি না—এটি আমাদের নিজস্ব ব্যাপার।”

এর এক দিন আগে, মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানও বলেন, তেহরান তার বৈজ্ঞানিক ও পারমাণবিক অধিকার থেকে সরে দাঁড়াবে না। যদিও তিনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিপ্রায় অস্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, “যারা ইরানকে অস্ত্র তৈরির অভিযোগে দোষারোপ করছে, তারাই আসলে গণবিধ্বংসী অস্ত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং এই অঞ্চলে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।”

এর আগে সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পারমাণবিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছে। এক অজ্ঞাত কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রস্তাবটি ইরানের স্বার্থ বিবেচনায় নেয়নি এবং এটি একটি “অগ্রহণযোগ্য” খসড়া।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। তারা পশ্চিমা শক্তির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।

এদিকে, মার্কিন আলোচক স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিরোধিতা করছেন এবং এটিকে ‘রেড লাইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জাতিসংঘের গোপন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান গত তিন মাসে অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রার কাছাকাছি ইউরেনিয়াম উৎপাদন ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। যদিও এটি এখনো ৯০ শতাংশের নিচে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়, তবে ৪ শতাংশের প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্তরের চেয়ে অনেক বেশি।

তবে ইরান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইরান বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে—অর্থনৈতিক মুদ্রার দরপতন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধরত আঞ্চলিক মিলিশিয়া গোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতি, এবং তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলি হামলার আশঙ্কা।

একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি না হলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে—বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলি হামলা পরিস্থিতিকে ঘনীভূত করে তুলেছে।

সূত্র: https://urli.info/-ywz

মিরাজ খান

×