
৭ জুন অনুষ্ঠেয় কোরবানিকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। তবে কিছুদিন আগে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রবল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায়, এ সময় জনজীবনে দেখা দেয় শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয় জনজীবন। এর জের ধরে পরবর্তী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পশুর হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেনি। তাই বলে কোরবানির প্রস্তুতি থেমে থাকেনি। নৌপথে বিভিন্ন ট্রাকে ও ট্রেনে বোঝাই করে ছোট-বড় গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়া, দুম্বা এবং উট পর্যন্ত আসতে শুরু করেছে হাটগুলোতে।
রাজধানীতে পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর হাট আনুষ্ঠানিকভাবে চারদিন আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই কয়েকটি হাট পূর্ণ হতে শুরু করেছে কোরবানির পশুতে। মিরপুরের গাবতলীর হাটে প্রায় সারাবছরই গরু-মহিষের বেচাকেনা চলে। সেখানেও দেখা যায় কোরবানির জন্য ছোট-বড় নানা পশুর সমাহার। অন্যান্য স্থানেও বসেছে কয়েকটি পশুর হাট। বৃষ্টির আশঙ্কায় অনেক স্থানে ত্রিপল দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ছাউনি। গবাদিপশুর খাদ্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পশু বিক্রেতাসহ ক্রেতা সমাগমও লক্ষ্য করা যায়। যেসব বাড়ির মালিকের বাড়িতে কোরবানির পশু রাখার মতো খালি জায়গা রয়েছে, তারা আগেভাগেই কিনছেন পশু। অধিকাংশ বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট বাড়িতে কোরবানির পশু রাখার স্থান সঙ্কুলান নেই। তারা আপাতত অপেক্ষায় আছেন কোরবানির ঠিক আগে আগে কিনবেন পশু। অনেকেই বহুতল ভবনের নিচতলায় গ্যারেজে বিকল্প স্থান হিসেবে পশু রাখার ব্যবস্থা করছেন। মোটকথা, পবিত্র ঈদুল আজহা এবং কোরবানিকে ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
এবারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৫৬ লাখ ২ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার। চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে গতবছর গরুর চেয়ে ছাগল ও ভেড়া কোরবানি হয়েছে বেশি। সেই হিসাবে এবারে পশুর দাম কম থাকার কথা। তবে এখন পর্যন্ত পশুর হাটে এর তেমন প্রভাব নেই বললেই চলে। গতবছর দেশব্যাপী বহুল আলোচিত ছাগল কাণ্ড এবং জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিগত আওয়ামী সরকারের পতনের প্রভাব কিছুটা হলেও এবার পড়ার আশঙ্কা রয়েছে পশুর বাজারে। বিগত সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে চলে গেছেন আত্মগোপনে। সেই প্রেক্ষাপটে এবারে পশুর হাটে কালো টাকার লেনদেন অপেক্ষাকৃত কম হতে পারে। বাজারে ছোট ও মাঝারি গবাদিপশুর চাহিদা বেশি। যেসব খামারি বহু যত্ন ও খরচপাতি করে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট ও মোটাতাজা করে তুলেছেন, এবারে সেগুলোর চাহিদা কম, তেমন বড় ও বাঘা ক্রেতা না থাকায়। দুর্নীতিবাজরা এবারে অনেকেই হিসাব-নিকাশ করছেন বৃহৎ আকারের কোরবানির পশু কেনার বিষয়ে। তাই বলে যাদের সামর্থ্য ও হালাল উপার্জন আছে, তারা নিশ্চয়ই এক বা একাধিক পশু কোরবানি দেবেন। এর বাইরেও পশুর হাটে জাল টাকা, চাঁদাবাজি, পথেঘাটে ছিনতাই, পরিবহনে চাঁদাবাজি ইত্যাদির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন দেশবাসীকে। আমাদেরও প্রত্যাশা, সব মিলিয়ে কোরবানির পশুর হাটগুলো থাকবে শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং শেষ পর্যন্ত বিপুল জনসমাগমে জমে উঠবে পশুর বেচাকেনা।
প্যানেল