ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেকারত্ব হতাশা আত্মহত্যা একই সূত্রে গাথা

মাহমুদুল হাসান শোভন

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ৪ জুন ২০২৫

বেকারত্ব হতাশা আত্মহত্যা একই সূত্রে গাথা

হতাশা হলো মানসিক অবস্থা, আর বেকারত্ব হলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা। তবে দীর্ঘ সময় বেকার থাকলে একজন ব্যক্তি হতাশায় ভুগতে পারে। বেকারত্ব থেকে আত্মহত্যার বিষয়টি সমাজে একটি গুরুতর এবং দুঃখজনক সমস্যা। এটি ব্যক্তির মানসিক, আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থার সাথে গভীরভাবে জড়িত। বাংলাদেশে ১৬-৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এই বয়সসীমার মধ্যে বেকারত্ব, শিক্ষাগত ব্যর্থতা, প্রেমে ব্যর্থতা এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১০,০০০ থেকে ১১,০০০ জনের মতো মানুষ আত্মহত্যা করেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১১,০৯৫ জন। বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে, বেকারত্বের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৪৫,০০০ জন আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, উচ্চশিক্ষিত বেকারদের মধ্যে হতাশা ও মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব ব্যক্তি মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। পরিবারের কাছে দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা থেকে জন্ম নেয় আত্মগ্লানি। সমাজের কটুক্তি, অবমূল্যায়ন ও লজ্জা বোধ বাড়তি চাপ তৈরি করে। মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে না পারায় জীবনে নেমে আসে হতাশা। আত্মীয়স্বজন বা সমাজের লোকজনের কটুক্তি, তুলনা, বা অবজ্ঞা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে।অনেক সময় পরিবার থেকেও মানসিক সহযোগিতা না পেলে ব্যক্তি একাকিত্বে ভোগে। হতাশা, ডিপ্রেশন, উদ্বেগ ইত্যাদি সমস্যাগুলো সময়মতো চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং না পেলে আত্মহত্যার চিন্তা প্রবল হতে পারে। বেকারত্ব থেকে আত্মহত্যার পেছনে বেশ কয়েকটি সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক কারণ কাজ করে। ‘সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ পাচ্ছে না মানে অযোগ্য’- এমন চিন্তা বাদ দিতে হবে। আত্মীয় বা বন্ধুর সাফল্যের সঙ্গে নিজের ব্যর্থতা তুলনা করে লজ্জা বোধ। দীর্ঘদিন বেকার থাকলে আত্মমর্যাদা কমে যায়। পরিবারের চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা বিশেষ করে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলে চাপ আরও বেড়ে যায়। ডিপ্রেশন (হতাশা) দীর্ঘদিন বেকার থাকার ফলে বিষণ্নতা দেখা দেয়। চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় নিজের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি না পাওয়া।
আত্মহত্যা থেকে বাঁচার উপায়গুলো মূলত মানসিক, সামাজিক ও চিকিৎসাগত দিক থেকে পরিচালিত হয়। যেমন মানসিকভাবে শক্ত থাকা কষ্ট আসতেই পারে, কিন্তু তা চিরস্থায়ী নয়। বিশ্বাসযোগ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলুন বন্ধু, পরিবার, শিক্ষক বা সহপাঠী।সবকিছুর জন্য নিজেকে দোষারোপ করা ভুল, ব্যর্থতা মানেই জীবনের শেষ নয়। নিজের সফলতাগুলো মনে করুন অতীতে আপনি অনেক কিছু পেরেছেন সেটা মনে রাখুন। নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম হতাশা কমাতে সাহায্য করে। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন প্রতিদিনের ছোট অর্জন আপনাকে এগিয়ে রাখবে। আপনি যে কাজ করতে ভালোবাসেন, তা নিয়ে ভাবুন ও পরিকল্পনা করুন। মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাপ যেমন Moodfit, Calm, Headspace ইত্যাদি অ্যাপ ব্যবহার করে মানসিক প্রশান্তি পেতে পারেন। নিজেকে বলুন: “এই অনুভূতি চিরস্থায়ী নয়।”২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন- এই সময়টুকু পার করলেই মনোভাব বদলাতে শুরু করতে পারে। অবিলম্বে কাউকে জানান চুপ থাকবেন না। আপনি যদি নিজে বা আপনার পরিচিত কেউ এমন পরিস্থিতিতে থাকেন, তাহলে দয়া করে একা থাকবেন না। বেকার যুবকদের জন্য প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মসংস্থান ও পরামর্শ সেবা দিতে হবে। পরিবার ও সমাজের সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। বাংলাদেশসহ বহু দেশে নানা সংবাদমাধ্যমে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায় যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী বা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
শিক্ষার্থী : ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি, (অনার্স, সেশন ২০-২১) ঢাকা কলেজ। 
মোবাইল : ০১৭০৪৭৯৩৬১২

প্যানেল

×