
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় ‘কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)’ এর জন্য সামরিক ইউনিফর্ম তৈরি হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কারখানাটি সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালামের মালিকানাধীন বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় তার ভাইসহ আরও তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
এই ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে একটি সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। হাজার হাজার সামরিক পোশাক তৈরির এ আয়োজনের পেছনে কারা আছে—এ প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।
ভারতীয় একটি অনলাইন পোর্টাল "ভারতেরই ডট কম" সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের ‘বেলুচিস্তান’ আখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, এই অঞ্চল নাকি ‘স্বাধীনতার সংগ্রামে’ নেমেছে। এ ছাড়া আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাও মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের “চিকেন স্নেক” আসলে দুটি—রংপুর ও চট্টগ্রাম, এবং এই অঞ্চল দুটির বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতার কারখানায় তৈরি পোশাক
জানা গেছে, শুধু আব্দুস সালামের কারখানাই নয়, চট্টগ্রামের আরও অন্তত তিনটি কারখানায় বিপুল পরিমাণ সামরিক ইউনিফর্ম তৈরি হয়েছে। এসব পোশাকের একটি বড় অংশ কেএনএফ-এর জন্য বরাদ্দ ছিল। গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে জানা যায়, শুধু পোশাক তৈরির কাজেই কেএনএফ-এর সঙ্গে প্রায় ২ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। তাহলে অস্ত্র, গোলাবারুদ, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য খরচ কত এবং সেই অর্থ কোথা থেকে আসছে—তা এখন বড় প্রশ্ন।
কেএনএফ: বিদ্রোহী নাকি গ্লোবাল প্লেয়ার?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেএনএফ এখন আর কেবল একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী নয়, বরং একটি সংগঠিত মিলিটারি ফোর্সে রূপ নিয়েছে। এদের রয়েছে সুপরিকল্পিত সামরিক কৌশল, প্রশিক্ষণ, ও লজিস্টিক সাপোর্ট। এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন নাথান বম, যিনি একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র এবং পার্বত্য ছাত্র পরিষদের সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি কেএনএফ গঠন করেন এবং ‘কুকি চীন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল’ নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দাবি তোলেন, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে।
তাদের দাবি, তারা ভূমি, পর্যটন, পুলিশ প্রশাসন এবং নিজেদের অস্ত্রধারী ব্যাটালিয়ন পরিচালনা করবে। তারা সাধারণ ক্ষমার শর্তে বিদ্রোহী কর্মকাণ্ডের বৈধতা চায়।
আন্তর্জাতিক যোগসূত্র ও আশঙ্কা
বিশ্লেষকদের মতে, কেএনএফ-এর সঙ্গে মিয়ানমারের কাচিন এবং ভারতের মণিপুরের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনটি জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া নামক জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে বলেও তথ্য রয়েছে।
আরও উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সদস্যরাও পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে বসবাস শুরু করেছে। তারা স্থানীয় জনগণের সাথে মিশে যাচ্ছে, এমনকি কেএনএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগও করছে বলে জানা গেছে।
ভারতের ভূমিকাকে ঘিরে প্রশ্ন
এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের সফরে রয়েছেন এবং নরেন্দ্র মোদির আতিথেয়তায় অবস্থান করছেন। প্রশ্ন উঠছে—এই সফরের আড়ালে কি ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভাজনের কোনো নকশা তৈরি হচ্ছে?
কারণ, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার কারখানায় যখন বিদ্রোহী সংগঠনের ইউনিফর্ম তৈরি হয়, তখন এ প্রশ্ন আর গুজব নয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ভারত কি আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেতরে একটি ‘নতুন বেলুচিস্তান’ তৈরির ছক আঁকছে?
জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেএনএফ এখন একটি গ্লোবাল প্লেয়ারের মতো কাজ করছে—অস্ত্র, অর্থ ও সামরিক পরিকল্পনায়। এই সংগঠনের সঙ্গে যদি শাসকদলের কোনো রকমের সম্পর্ক থেকে থাকে, তাহলে তা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের উচিত এখনই সতর্ক হওয়া। পার্বত্য অঞ্চল রক্ষায় কেবল সেনাবাহিনী নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, গোয়েন্দা নজরদারি এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিকভাবে জবাবদিহির ব্যবস্থা।
অন্যথায়, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপদের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশের এই ভূখণ্ড—এমনটাই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
সূত্র: NTV
আঁখি