
সান দিয়েগোর লা জোলার নিজ বাড়িতে নিয়মিত ব্যায়াম করেন ৭০ বছর বয়সী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এরিক টপোল। দীর্ঘজীবন নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা করেছেন তিনি—এবং এখন নিজেই সেই জ্ঞান অনুযায়ী জীবনযাপন করছেন।
১৭ বছর আগে, যখন এরিক টপোল ছিলেন ৫৩ বছর বয়সী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, তখন তিনি খুঁজতে শুরু করেন কেন কিছু মানুষ বয়স বাড়ার পরও সুস্থ থাকেন, আর অন্যরা নয়।
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, এই পার্থক্যের মূল কারণ হয়তো জেনেটিক। ফলে তিনি ও তার সহকর্মীরা প্রায় ছয় বছর ধরে ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ১,৪০০ জন সুস্থ ব্যক্তির জিনোম বিশ্লেষণ করেন। তাদের সকলেই দীর্ঘজীবী এবং সুস্থ ছিলেন—“সুপার এজার” বলতে যা বোঝায়।
কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মধ্যে তেমন কোনো জেনেটিক মিল নেই। অর্থাৎ, শুধু ডিএনএ দীর্ঘজীবনের গোপন চাবিকাঠি নয়। তাহলে এর পেছনে আসলে কী আছে?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে টপোল লিখেছেন একটি নতুন বই: “Super Agers: An Evidence-Based Approach to Longevity”। এই বইয়ে শত শত গবেষণা বিশ্লেষণ করে তিনি তুলে ধরেছেন কীভাবে সঠিক জীবনধারার মাধ্যমে বয়সের গতি কমানো যায় এবং ভবিষ্যতে কীভাবে ওষুধ, বায়োকেমিস্ট্রি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে থামাতে সাহায্য করতে পারে।
টপোল বলেন, সুস্থ বার্ধক্যের সঙ্গে সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক রয়েছে ব্যায়ামের। “এটাই একমাত্র উপায় যা সত্যিকার অর্থে বয়সের গতি কমাতে প্রমাণিতভাবে কার্যকর,” বলেন তিনি। “ডায়েট, ঘুম এবং সামাজিক সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এক নম্বরে রয়েছে ব্যায়াম।”
কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে দশকের পর দশক ধরে তিনি রোগীদের জোর দিয়েছেন হাঁটা, সাঁতার, সাইকেল চালানো বা এলিপটিকাল ট্রেনারের মতো অ্যারোবিক ব্যায়ামে। নিজেও নিয়মিত ৩০ মিনিট করে এসব করতেন। কিন্তু বইয়ের গবেষণা করতে গিয়ে তিনি বুঝেছেন, পেশি গঠনের ব্যায়াম বয়সের সঙ্গে সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, “আমি আগে কখনো উপরের শরীর নিয়ে কাজ করিনি। শুধু হাঁটাহাঁটি বা সাইক্লিং করতাম। এখন আমি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী।”
তার ব্যায়াম রুটিনে আছে প্ল্যাঙ্ক, লাঞ্জ, স্কোয়াট, মেডিসিন বল দিয়ে সিট-আপ, কোবরা পোজসহ বিভিন্ন মাটির ব্যায়াম। তিনি রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করেন, ব্যালান্সের জন্য ফোম প্যাডে দাঁড়ান, এক পায়ে দাঁড়িয়ে শিন স্পর্শ করেন—সব মিলিয়ে একধরনের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন। তিনি প্রথমে সপ্তাহে দু’বার ট্রেইনারের সাহায্য নিলেও এখন মাসে একবারের বেশি ট্রেইনারের দরকার পড়ে না।
টপোল বলেন, “যে কেউ, যেকোনো বয়সে শক্তি বাড়াতে পারে। বয়স বাড়লে পেশি গঠন হয় না—এই ধারণা ভুল।” তিনি এখনও সপ্তাহে চারদিন অ্যারোবিক ব্যায়াম করেন এবং বাকি দিনে করেন রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং। অনেক সময় দুটো একসাথেও করেন। “আমি রোগীদের বলি, কাজের ফাঁকে সময় বের করো। হয়ত লাঞ্চ ব্রেকে হাঁটো, না হয় রাতে ঘরে কিছু ব্যায়াম করো।”
টপোলের মতে, বার্ধক্যে অনেকেই একাকী হয়ে পড়েন, যা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। প্রকৃতিতে সময় কাটানো এবং বন্ধুদের সঙ্গে ব্যায়াম করাও দীর্ঘজীবনের জন্য উপকারী। “যদি প্রকৃতির মধ্যে কিছুটা হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা যায় বন্ধুদের সঙ্গে, তাহলে সেটা একধরনের ‘দুই বা তিনের এক’ পাওনা।”
টপোল বলেন, “লক্ষ্য কেবল দীর্ঘায়ু নয়, হেলথস্প্যান—অর্থাৎ এমন বছরগুলো যাতে মানুষ প্রধান বার্ধক্যজনিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে, যেমন ক্যানসার, হৃদরোগ বা নিউরোডিজেনারেটিভ অসুখ।”
তিনি আরও বলেন, “জীবনধারার মাধ্যমে আমরা ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সুস্থ বার্ধক্য অর্জন করতে পারি—বিশেষ করে ব্যায়ামের মাধ্যমে।” টপোলের নিজের লক্ষ্য? “যতদিন আমি বড় কোনো রোগ ছাড়াই থাকতে পারি, ততদিন জীবিত থাকতে চাই। যদি ৮৫ বছর বয়সেও আমি সুস্থ থাকি, তাহলে সেটাই ‘জ্যাকপট।’ আমি সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।”
সূত্রঃ washingtonpost
নোভা