
ছবি: সংগৃহীত
নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হল তার চুল। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই কেশের রাজ্যেও আসে রুপালি ছোঁয়া। কারও কারও জন্য এটি দুশ্চিন্তার, আবার কেউ কেউ গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। তবে আপনি যেটিই বেছে নিন, চুল পাকলে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি - সেটি জানতেই আজকের এই প্রতিবেদন।
চুলের গোড়ায় থাকা পিগমেন্ট সেল ‘মেলানিন’ তৈরি করে, যা চুলে রঙ দেয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কোষগুলো মারা যায় এবং চুলে রঙ আসা বন্ধ হয়। ফলে নতুন চুল গজায় ধূসর, রুপালি বা সাদা রঙে। একবার মেলানিন তৈরি বন্ধ হলে, সেই ফোলিকল আর রঙিন চুল তৈরি করতে পারে না।
চুল পাকা শুরু হওয়ার সময়টা নির্ভর করে জিনের ওপর। যদি বাবা-মায়ের কারও ৩০ বছর বয়সেই চুল পাকা শুরু হয়ে থাকে, আপনার ক্ষেত্রেও তা আগেভাগে হতে পারে।
শ্বেতাঙ্গদের গড়ে ৩০-এর দশকে চুল পাকা শুরু হয়। এশিয়ানদের ক্ষেত্রে তা ঘটে ৩৮-৪০ বছর বয়সে। আফ্রিকানদের ক্ষেত্রে গড়ে ৪৫ বছর বয়সে।
যদি কারও চুল গড়ে নির্ধারিত সময়ের ১০ বছর আগেই পাকা শুরু করে, তবে তা “প্রিম্যাচিওর গ্রেইনেস” হিসেবে ধরা হয়। শ্বেতাঙ্গদের জন্য ২০ বছর বয়সের আগে, এশিয়ানদের জন্য ২৫ এর আগে এবং আফ্রিকানদের জন্য ৩০ বছরের আগে।
হ্যাঁ, কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা চুল পাকার পেছনে দায়ী হতে পারে। যেমনঃ ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি, থাইরয়েড রোগ, ভিটিলিগো (যা রঙ উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস করে)।
অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা, যেখানে রঙিন চুল ঝরে পড়ে এবং ফাঁকা জায়গায় ধূসর বা সাদা চুল গজায়।
চাপ সরাসরি চুল পাকা করে না, তবে এটি চুলের জীবনচক্রে হস্তক্ষেপ করে। এতে করে চুল দ্রুত ঝরে পড়ে এবং নতুন চুল গজালে তা ধূসর হতে পারে।
ধূমপানকারীরা ৩০ বছর বয়সের আগেই চুল পাকার সম্ভাবনায় ২.৫ গুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া ধূসর চুলে হলদে ভাব আসার পেছনেও ধূমপান দায়ী।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী একটি ধূসর চুল তুললে তিনটি চুল গজায় - এটি মিথ। তবে চুল উপড়ানো ঠিক নয়, কারণ এটি ফোলিকল ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ভবিষ্যতে সেখানে চুল গজানো বন্ধ হতে পারে।
ধূসর চুল সাধারণত বেশি পাতলা হয়, কারণ এতে কাটিকল স্তর কম থাকে। ফলে সূর্যরশ্মি, পানি, তাপ এবং রাসায়নিকের প্রভাবে এটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়।
যত্নে রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার ও হেয়ার অয়েল: ধূসর চুলে আর্দ্রতা বজায় রাখে, অ্যান্টি-ফ্রিজ প্রোডাক্ট: চুলে জৌলুশ ফিরিয়ে আনে, পার্পল শ্যাম্পু: হলদে ভাব দূর করে চুলকে উজ্জ্বল রুপালি রঙ দেয়
এই চুল সাধারণত বেশি শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়। তাই হালকা কন্ডিশনার ব্যবহার করা জরুরি, যা চুলের গভীরে পৌঁছায়। কেবল বাইরের প্রলেপ দেওয়া তেল বা ল্যানোলিন ব্যবহার না করাই ভালো।
চুল রং করতে চাইলে, বাজারের রং ব্যবহার করতে পারেন। তবে ধূসর চুলের জন্য তৈরি রং বেছে নেওয়াই ভালো। স্থায়ী রং (পার্মানেন্ট) মূল চুলের রং ঢাকতে বেশি কার্যকর। পেশাদার সেলুনে রং করালে আরও ভালো ফল পাবেন।
যারা রাসায়নিক এড়িয়ে চলতে চান, তারা ব্যবহার করতে পারেন হেনা, যা চুলে প্রাকৃতিক রং যোগ করে ধূসর চুল ঢেকে রাখে।
চুলে যদি বেশিরভাগ অংশেই ধূসর রং চলে আসে, তবে ধাপে ধাপে রং ছাড়ুন। হাইলাইট বা ডেমি পার্মানেন্ট রং ব্যবহার করে ধূসর চুলকে সহজে মিশিয়ে নিতে পারেন।
চুলে স্টাইল, লেয়ার ও টেক্সচার যোগ করুন। ছোট চুল যেমন গ্রে-র সঙ্গে ভালো মানায়, তেমনই লম্বা লেয়ার কাটা চুলও চুলে গতিশীলতা ও সৌন্দর্য যোগ করে।
চুল পাকা যেমন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, তেমনি এটিকে সঠিক যত্ন ও সচেতনতায় রূপ দেওয়া যায় আত্মবিশ্বাসের প্রতীকে। আপনি চাইলে ঢেকে রাখুন, অথবা গর্বের সঙ্গে রুপালি ঝলক দেখান- সিদ্ধান্ত আপনার।
সূত্র: https://shorturl.at/BGkrw
মিরাজ খান