
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান পৃথিবীর দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং অনিশ্চিত প্রেক্ষাপটে মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। ক্যারিয়ারে চ্যালেঞ্জ, ব্যক্তিগত বিপর্যয় কিংবা বৈশ্বিক সংকট—সব কিছুর মুখোমুখি হওয়ার সময় আমাদের মানসিক শক্তিই নির্ধারণ করে, আমরা কীভাবে সেগুলোর মোকাবিলা করব।
দৃঢ় মানসিকতা এমন একটি মানসিক প্রস্তুতি, যা ব্যর্থতা থেকে শিখতে, প্রতিকূলতাকে মেনে নিতে এবং আগের চেয়ে শক্তভাবে উঠে দাঁড়াতে সহায়তা করে। নিচে এমন পাঁচটি বইয়ের আলোচনা করা হলো, যা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পাঠকদের মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
১. মাইন্ডসেট: দ্য নিউ সাইকোলজি অব সাকসেস — ক্যারল এস. ডুয়েক
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ক্যারল ডুয়েকের গবেষণা ‘ফিক্সড’ এবং ‘গ্রোথ’ মাইন্ডসেটের ধারণাকে জনপ্রিয় করে। ‘ফিক্সড মাইন্ডসেট’-এ বিশ্বাসীরা মনে করে, বুদ্ধিমত্তা বা প্রতিভা জন্মগত; অন্যদিকে ‘গ্রোথ মাইন্ডসেট’ অনুসরণকারীরা বিশ্বাস করে, কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন সম্ভব।
ডুয়েক দেখিয়েছেন, যারা প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দেয়, তারা কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হতে সাহসী হয় এবং উন্নতির সম্ভাবনা থাকে বেশি। এই বইয়ে রয়েছে বাস্তব কৌশল—‘আমি পারি না’ চিন্তাকে ‘আমি এখনো পারছি না’ এ রূপান্তর করার মতো মানসিক কৌশল।
২. গ্রিট: দ্য পাওয়ার অব প্যাশন অ্যান্ড পারসিভেয়ারেন্স — অ্যাঞ্জেলা ডাকওয়ার্থ
অ্যাঞ্জেলা ডাকওয়ার্থ দেখিয়েছেন, প্রতিভার চেয়ে ‘গ্রিট’—দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে অধ্যবসায়—সাফল্যের প্রধান নিয়ামক। তার গবেষণায় দেখা গেছে, কঠিন সামরিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আইকিউ নয়, বরং ‘গ্রিট স্কোর’ বেশি কার্যকর।
ডাকওয়ার্থ ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে ধাপে ধাপে কোনো বিষয়ের প্রতি নিজের টান খুঁজে বের করা, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং ‘ডিলিবারেট প্র্যাকটিস’-এর মাধ্যমে দৃঢ়তা গড়ে তোলা যায়। তিনি দেখান, পরিবার, স্কুল বা প্রতিষ্ঠান—যেকোনো জায়গায় এই মানসিকতা সৃষ্টি করা সম্ভব।
৩. দি অবস্ট্যাকল ইজ দ্য ওয়ে — রায়ান হলিডে
স্টোইক দর্শনের উপর ভিত্তি করে রায়ান হলিডে বলেন, জীবনের বাধাগুলোই আমাদের উন্নতির পথ খুলে দেয়। তিনি এই প্রাচীন দর্শনকে তিনটি ধাপে ভাগ করেছেন—দৃষ্টিভঙ্গি, কার্যকলাপ এবং ইচ্ছাশক্তি।
হলিডে শিখিয়েছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিকে আবেগের ছায়া ছাড়াই পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সৃজনশীল ও দৃঢ় কর্মকৌশলের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে এবং যা পরিবর্তন করা যায় না তা মেনে নিয়ে নিজের সংকল্প অটুট রাখতে হবে। তার বই প্রমাণ করে, স্টোইক দর্শন আধুনিক জীবনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধেও একটি কার্যকর মানসিক অস্ত্র।
৪. মেন্টাল টাফনেস — গর্ডন কোহেন
ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানের কৌশলকে সাধারণ জীবনের জন্য সহজ করে উপস্থাপন করেছেন গর্ডন কোহেন। তার চার স্তম্ভের কাঠামো—আত্মনিয়ন্ত্রণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্বাস গঠন এবং কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ—দিয়ে যে কেউ নিজের মানসিক শক্তি উন্নত করতে পারে।
এই বইয়ে রয়েছে বাস্তবমুখী কৌশল: প্রতিযোগিতার আগে ক্রীড়াবিদদের মতো ভিজ্যুয়ালাইজেশন, ইতিবাচক আত্মকথন এবং ‘স্ট্রেস ইনোকুলেশন’ প্রশিক্ষণ, যা চাপের মধ্যে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে সহায়তা করে।
৫. ক্যান্ট হার্ট মি — ডেভিড গগিন্স
ডেভিড গগিন্সের আত্মজীবনী এমন একজন মানুষের গল্প, যিনি নিজেকে শারীরিক ও মানসিক সীমা অতিক্রম করতে বাধ্য করেছেন। ‘৪০% রুল’ তার কেন্দ্রীয় দর্শন—যখন আপনি ভাবেন আপনার সামর্থ্যের শেষ, তখন আপনি মাত্র ৪০% পর্যন্ত গেছেন।
তার ‘অ্যাকাউন্টাবিলিটি মিরর’ এবং ‘সোল টেকিং’ কৌশল দেখায়, কীভাবে চরম কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠেলে দেয়া যায়। গগিন্সের বই শুধু অনুপ্রেরণামূলক নয়, বরং মানসিক সীমা চ্যালেঞ্জ করার আহ্বান।
এই পাঁচটি বই বিভিন্ন উপায়ে মানসিক দৃঢ়তা গড়ে তোলার পথ দেখায়। ডুয়েকের ‘গ্রোথ মাইন্ডসেট’, ডাকওয়ার্থের ‘গ্রিট’, হলিডের স্টোইক দর্শন, কোহেনের ক্রীড়া-কেন্দ্রিক কৌশল এবং গগিন্সের চরম অভিজ্ঞতা—সব মিলে তৈরি একটি পূর্ণাঙ্গ মানসিক প্রস্তুতির ধারণা দেয়।
সূত্র: https://www.newtraderu.com/2025/05/16/5-books-to-build-a-strong-mindset/
মুমু