
ছবি: জনকন্ঠ
পাখির কলোকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে। গাছ-গাছালিতে ভরে আছে ছাদসহ পুরো বাড়ি। শহরের মাঝে যেন গ্রামীন পরিবেশ।পূবের আকাশ ফর্সা হতেই এই ছাদ বাগানে আসে নানা জাতের পাখি। বাগানের যেদিকে তাকাই ফল, ফুলে ভরে আছে পুরো বাগান। প্রতিটি গাছেই যত্নের ছোঁয়া। সবুজের সমারোহে চোখ জুড়ে যায় এত সুন্দর করে সাজিয়েছেন ডাক্তার ও শিক্ষক দম্পতি। কাক ডাকা ভোরে এই দম্পতি ছাদবাগানের কাজে লেগে যান। একজন ফল, ফুল আর সবজির গাছের যত্ন করেন। অপরজন ছাদের হাউজের দেশী মাছ গুলোর খাবার দেয়া, হাউজ পরিষ্কার সহ নানা কাজ করেন।
রংপুর শহরের কেরানীপাড়ায় তাদের বাড়ি। এই দুজন কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ। অবসর প্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আজিজুল ইসলাম বেলাল অপরজন রংপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম ডেইজী। এই দম্পতি প্রথমে শখের বসে ছাদবাগান শুরু করলেও সময়ের সাথে সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বৈশিক উষয়নের কমানোর উদ্দেশ্যে নানা পরিকল্পনা নেন। ২ হাজার ২শ স্কয়ার বর্গফিটের এই ছাদ বাগানের একদিকে ফুল,একদিকে ফল ও সবজি এবং দুটি বড় বড় হাউজে টেংরা, কৈ, শিং , মাগুর ও পুঁটিসহ চাষ করছেন বিভিন্ন দেশীয় মাছ। এ সমস্ত মাছ, সবজি আর ফল চাষ করে সারা বছর নিজের বাড়ির চাহিদা পূরণ করে পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝেও বিতরণ করেন এই দম্পতি।
বাগান ঘুরে দেখা যায়, সেখানে কলা, ডালিম, আনারস, লেবু, আম, পেয়ারা র্পেঁপে, ড্রাগন, কামরাঙ্গা ফলের গাছ। অধিকাংশ গাছে ফল ধরে আছে। পুঁইশাক,পাটশাক, লালশাক, লাউশাক, সজনে শাক, কলমি শাকও রয়েছে বাগানে। আছে শসা, বেগুন, টমেটো, লাউ, কুমড়া, বরবটি, শিমসহ নানা পদের সবজি। সঙ্গে আছে আদা, মরিচ, পিঁয়াজ,হলুদ ও চিনা বাদাম গাছ ।
ফুলের মধ্যে রয়েছে রক্ত জবা, নয়নতারা, কামিনী, গন্ধরাজ, রঙন, ক্যামেলিয়া, অর্কিড, বিভিন্ন জাতের এ্যাডেনিয়াম ,মাধবীলতা, শিউলী, কাঁঠালচাপা, বেলী, গোলাপ, কাঁশফুল, এ্যালমুন্ডাসহ নানা জাতের দেশী বিদেশী ফুল।
অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম ডেইজী জানান ২০১৮ সালের দিকে কয়েকটি টবে ফুলের গাছ লাগিয়ে আমরা যাত্র্রা শুরু করি। সময় যতই যায় গাছগুলিকে নিজের সন্তানের মত যত্ন শুরু করি। সময়ের সাথে সাথে অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। আমি শিক্ষক মানুষ সারাদিন স্কুলে কাটাতে হতো। তখন বাগানে এত সময় দিতে পারতাম না। এখন অখন্ড অবসর সব সময় এর যত্ন করি। প্রায় সময় কৃষিবীদদের কাছে পরামর্শ নেই ও ইউটিউব দেখে বাগানে সবজি ফুল ও ফলের চাষের পদ্বতি শিখি। তিনি আরও জানান, আমাদের বাগানে কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগ করি না। জৈবসার, কিচেন কম্পোষ্ট, মাছের বর্জপানি এবং খৈইল দেই। প্রতিমাসে খরচ হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। সাজেদা বেগম আরও জানান বাগানে আসলে মনে দারুন প্রশান্তি লাগে। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা কাজ করি। প্রতিটি গাছ আমার সন্তানের মত। ওদের দেখলেই বুঝতে পারি ওদের খাবারের সংকট হচ্ছে কিনা। প্রতিদিন যে পরিমান সবজি আর ফল উৎপাদন হয় তা আামার পরিবারের চাহিদা পুরণ করে পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে বিতরণ করি, যা সত্যিই খুব আনন্দের।
ডাঃ আজিজুল ইসলাম বেলাল জানান আমি বাগানে গেলেই মনে ভরে যায়। ছোট বেলার সেই দিনগুলির কথা মনে পড়ে। বিলে মাছ ধরা, সবজির ক্ষেতে সবজি তোলার কথা মনে পড়ে যায়। বিকেলে ছাদে দক্ষিনা ঠান্ডা বাতাসে সব কিছু এলামোলো করে দেয় তখন আরও ভালো লাগে।অধিকাংশ মানুষ ছাদ বাগানে সবজি,ফুল ও ফলের চাষ করে। কিন্তু আমাদের বাগানে সবকিছুর পাশাপাশি মাছের চাষ করছি। এ জন্য ছাদের উপর বিশেষ ভাবে তৈরী করা হয়েছে দুটি হাউজ। এখানে কৈ,টেংরা, মাগুর, শিং, পুঁটি সহ বিভিন্ন প্রকার দেশী মাছের চাষ করছি। দুপুরের চড়া রোদের কারণে কচুরিপানা লাগানো হয়েছে। ঠান্ডার মধ্যে মাছ থাকে। অতিরিক্ত কচুরিপানা হলে তখন জৈব সার হিসেবে গাছের গোড়ায় দেয়া হয়। এছাড়া হাউজের পানি গাছের জন্য খুব উপকারী। প্রতিদিন দু বেলা খাবার দেই। তখন মাছের ছুটাছুটিতে আনন্দে ভরে উঠে মন। ভবিষ্যতে বারোমাসি কাঁঠাল ও ভিয়েতনামী নারকেল গাছ লাগাবো।
এই দম্পতি জানান তাদের বাজারের সবজি কখনোই কিনতে হয় না যদি রুচির পরির্বতন করতে চান তখন বাজার থেকে কিছু সবজি কিনে নিয়ে আসেন। এই অবসরকালীন সময়ে দুজনেই ভীষন ব্যস্ত তাদের বাগান নিয়ে। শুধু ছাদে নয় বারান্দায়, ঘরে নানা জাতের দেশী বিদেশী গাছে ভরা তাদের বাড়ি। এটি যেন পাখিদের অভয় অরণ্য। তারা জানান কয়েকদিন আগে বাগানের গাছে ঘুঘু পাখি বাচ্চা দিয়েছিল। তাদের বাগান দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন,নিয়ে যান ছাদ বাগান তৈরীর অনুপ্রেরণা।
সময়ের সাথে এ বাগান এখন আর শৌখিনতার জায়গায় নেই। সবজি দিয়ে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদাপূরণ, বিনোদন এবং অবসর কাটানোর এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে এ ছাদ বাগানগুলো।
মুমু