
ছবি : সংগৃহীত
অটিজম একটি স্নায়ুবিক (নিউরোলজিক্যাল) বিকাশজনিত সমস্যা, যা সাধারণত শিশুর জীবনের শুরুর দিকেই প্রকাশ পেতে শুরু করে। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণ শিশুর মতো সামাজিকভাবে মেশা, কথা বলা, চোখে চোখ রাখা বা আবেগ প্রকাশে সমস্যা অনুভব করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অটিজম কেন হয়? চলুন সহজ ভাষায় জানি—
অটিজমের মূল কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম হওয়ার কোনও একক কারণ নেই। বরং এটি বিভিন্ন জেনেটিক (বংশগত) ও পরিবেশগত কারণে হতে পারে। নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
১. বংশগত বা জেনেটিক কারণ
বেশিরভাগ গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজম মূলত বংশগত। অর্থাৎ, পরিবারের অন্য কেউ যদি অটিজমে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মেও এই ঝুঁকি থাকে। কিছু জিনে পরিবর্তন (mutation) হলে সেগুলো স্নায়ুবিক বিকাশে প্রভাব ফেলে।
২. গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য
গর্ভাবস্থায় যদি মা ডায়াবেটিস, ইনফেকশন, থাইরয়েড সমস্যা, অতিরিক্ত স্ট্রেস বা দূষণের শিকার হন, তাহলে গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুর বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এতে ভবিষ্যতে অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
৩. প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত কারণ
গর্ভকালীন সময় বা জন্মের পর শিশুর যদি বেশি মাত্রায় দূষণ, কীটনাশক বা ভারী ধাতুর সংস্পর্শে আসা হয়, সেগুলোরও ভূমিকা থাকতে পারে।
৪. মস্তিষ্কের গঠন ও কাজের ব্যতিক্রম
অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের কিছু অংশের গঠন ও কাজ সাধারণের চেয়ে ভিন্ন হয়। যার ফলে সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ ও সংবেদনশীলতাতে সমস্যা দেখা দেয়।
৫. সময়ের আগে জন্ম (প্রিম্যাচিউর বেবি)
সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া অনেক শিশু অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে যারা ২৬ সপ্তাহের আগেই জন্ম নেয়।
অটিজম কি টিকতে পারে আজীবন?
হ্যাঁ, অটিজম একধরনের জীবনব্যাপী স্নায়ুবিক অবস্থা, তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা, বিশেষ শিক্ষা ও থেরাপির মাধ্যমে একজন অটিস্টিক শিশু অনেক ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে।
লক্ষণ কী কী? এবং করণীয়..
শিশুর আচরণে যদি অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন, যেমন—
- অন্যের সঙ্গে চোখে চোখ রাখা থেকে বিরত থাকা
- ডাকলে সাড়া না দেওয়া
- কথা বলা দেরি হওয়া
- খেলায় আগ্রহ না থাকা
তাহলে দ্রুত শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোরোগ চিকিৎসক বা থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
মনে রাখতে হবে , অটিজম কোনো অপরাধ বা অভিশাপ নয়। এটি একটি ভিন্নভাবে গঠিত জীবনের নাম। সঠিক পরিচর্যা, ভালোবাসা এবং সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে একজন অটিস্টিক শিশুকে স্বাভাবিক জীবনের পথে নিয়ে যেতে।
সা/ই