
এই দুনিয়া প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে। চারপাশের দৌড়ঝাঁপে সন্তানের সঙ্গে একটু খোলামেলা কথা বলার সময়ও যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাবা হিসেবে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যা সন্তানের সঙ্গে না বললেই নয়। কারণ এসব বিষয়ই গড়ে দেয় ওদের মেরুদণ্ড, ওদের মূল্যবোধ।
নিচে এমনই ৫টি গভীর ও প্রয়োজনীয় কথোপকথনের বিষয় তুলে ধরা হলো যা একজন বাবার সন্তানকে শেখানো জরুরি।
১. অনলাইনে কীভাবে নিরাপদ থাকবে, কীভাবে দায়িত্ববান থাকবে
আজকের শিশুরা বড় হচ্ছে স্ক্রিনের আলোয়। ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এ যেন ওদের দ্বিতীয় বাড়ি। কিন্তু এই ভার্চুয়াল জগতে কত ফাঁদ, কত বিপদ! বাবা হিসেবে দরকার সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা,কী শেয়ার করবে, কী করবে না, কাউকে কীভাবে ‘না’ বলবে, কিংবা যদি কেউ অপমান করে তখন কী করবে। ছোট থেকেই শেখাতে হবে, প্রযুক্তি ব্যবহার করলেই দায়িত্ব আসে,আর সেই দায়িত্ব না বুঝলে বিপদ ডেকে আনে।
২. মন খারাপ হলে চেপে না রেখে বলা যায়,এই নিরাপত্তাটা দিন
সন্তান কাঁদলে অনেক বাবা বলেন, “এইসব না করো, শক্ত হও!” কিন্তু জানেন কি, ঠিক তখনই আপনি ওর মধ্যে একটা দেয়াল তুলে দিচ্ছেন? সন্তান যেন বুঝতে পারে মন খারাপ হলে, ভয় পেলে, কিংবা কষ্ট পেলে সেটা লুকিয়ে রাখা নয়, শেয়ার করাটাই সাহস। বাবার মুখে যদি শোনা যায় “আমি নিজেও একসময় দুঃখ পেতাম” তাহলে সন্তান বুঝবে, আবেগ লুকানো নয়, বোঝা আর বোঝানোই গুরুত্বপূর্ণ। ছেলে হোক বা মেয়ে মন তো সবারই আছে!
৩. টাকার মূল্য ছোটবেলা থেকেই শেখান, মজার ছলে
পয়সা হাতে পেলেই খরচ করে ফেলা এটাই কি স্বাভাবিক নয়? কিন্তু আপনি যদি ছোট থেকেই বলেন,“এই টাকাটা রাখো, দু’সপ্তাহ পর আমরা কিছু কিনব” তাহলেই গড়ে উঠবে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সচেতনতা। চকলেট, খেলনা, অথবা প্রিয় কোনো জিনিসের জন্য সঞ্চয়ের অভ্যাস শেখানো যায় খেলার ছলেই। এসব ছোট ছোট শিক্ষা ভবিষ্যতে ওকে আত্মনির্ভর করে তুলবে যেখানে সে বুঝবে, প্রয়োজন আর ইচ্ছের ফারাক কোথায়।
৪. ‘তুমি কোথা থেকে এসেছো’ এই গল্পটা ওকে বলুন
সন্তানের যখন প্রশ্ন জাগে “আমরা কারা?”, তখন উত্তরটা আপনি দিতে পারেন ইতিহাসের গল্পে। পারিবারিক কষ্ট, দাদুর সংগ্রাম, মায়ের শৈশব, কিংবা আমাদের সংস্কৃতি এসব শোনাতে হবে গল্পের মতো, ভালোবাসার মতো। এসব গল্প ওর মধ্যে জন্ম দেবে গর্ব, শেকড়ের টান, এবং এমন এক আত্মপরিচয় যা কোনো বইয়ে শেখানো যায় না। মনে রাখবেন, পারিবারিক গল্প যত বেশি ভাগ করবেন, সম্পর্ক তত গভীর হবে।
৫. ছেলেমেয়ে নয়, মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিন
মেয়ে বলে রান্না শিখবে, আর ছেলে বলে বাইরে যাবে,এই ভাবনাটা বদলাতে পারেন আপনি, খুব সহজেই। আপনি যদি নিজের মেয়েকে বলেন, “তুমি নেতা হতে পারো” বা ছেলেকে বলেন, “ঘরের কাজে হাত লাগাও” তাহলেই শুরু হবে পরিবর্তন। বাবার চোখে ছেলে-মেয়ে যদি সমান মর্যাদা পায়, সন্তানও শিখে,যোগ্যতা আর ন্যায্যতাই বড়, লিঙ্গ নয়।
একজন বাবা যদি সন্তানকে শুধু পড়াশোনা বা শাসনের মধ্যে আটকে না রেখে হৃদয়ের কাছে টেনে আনেন, তাহলেই গড়ে ওঠে সেই শক্ত ভিতbযার ওপর দাঁড়িয়ে সন্তান একদিন নিজের পথ নিজেই চিনে নেয়। কথা বলুন, শুনুন, পাশে থাকুন,কারণ বাবার মুখেই তো সন্তানের সবচেয়ে বড় পাঠ লুকিয়ে থাকে।
সূত্র:https://tinyurl.com/4cn2av64
আফরোজা