
ছবি: প্রতীকী
ক্ষমতা যেমন প্রেরণা জোগাতে পারে, তেমনি তা নষ্টও করতে পারে। নেতৃত্ব যেমন উত্তরণ ঘটাতে পারে, তেমনি তা শোষণের হাতিয়ারও হতে পারে। পার্থক্যটা নির্ভর করে—নেতা কোন নীতির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
এই সময়ে যেখানে দখলদারিত্ব ও আধিপত্যের মোহ প্রকট, সেখানে প্রকৃত নেতারা জানেন—ক্ষমতা কোনও পুরস্কার নয়, এটি একটি গুরুতর দায়িত্ব। নেতৃত্ব মানে জবাবদিহি, বিনয় এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি।
নিচে উল্লিখিত ১০টি বই নেতৃত্ব, দায়িত্ব ও ক্ষমতা নিয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে—নৈতিকতা, আত্মচর্চা, ও বাস্তববুদ্ধির আলোকে।
১. লিডার্স ইট লাস্ট (সাইমন সিনেক)
সেনা নিয়ম অনুসারে—নেতারা সবার পরে খান। এই বইতে সিনেক দেখিয়েছেন কিভাবে মানবতাকেন্দ্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলে টিমে আস্থা, আনুগত্য ও স্থায়িত্ব গড়ে ওঠে। জীববিজ্ঞান ও কর্পোরেট দৃষ্টান্তে ভর করে লেখা বইটি শেখায়—নেতৃত্ব মানে মানুষকে সুরক্ষা ও সম্মান দেওয়া।
২. টিম অব রাইভালস (ডরিস কার্নস গুডউইন)
আব্রাহাম লিংকনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এক অসাধারণ বিশ্লেষণ। তিনি নিজ বিরোধীদের নিয়ে গঠন করেছিলেন মন্ত্রিসভা। ক্ষমতা দখলের নয়, বরং ঐক্য প্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব কেমন হওয়া উচিত—এই বই তার ইতিহাসভিত্তিক অনুপম দৃষ্টান্ত।
৩. দ্য ফর্টি-এইট লজ অব পাওয়ার (রবার্ট গ্রিন)
এটি একটি কৌশলগত বই যা ইতিহাসের আলোকে ক্ষমতার ৪৮টি নিয়ম বিশ্লেষণ করে। যদিও অনেকেই একে নিষ্ঠুর মনে করেন, এটি প্রকৃতপক্ষে দেখায়—ক্ষমতা কীভাবে কাজ করে এবং কিভাবে তা বুঝে চালনা করা যায়। সতর্কভাবে ব্যবহার করলে এটি হতে পারে নেতৃত্বের গোপন অস্ত্র।
৪. গুড টু গ্রেট (জিম কলিন্স)
কেন কিছু প্রতিষ্ঠান অসাধারণ হয়ে ওঠে আর কিছু থেমে যায়? এই বই গবেষণাভিত্তিক বিশ্লেষণ দিয়ে নেতৃত্বের মানে বোঝায়—বিনয়, শৃঙ্খলা ও দৃঢ় সংকল্প। এটি চমক নয়, টিকে থাকার দর্শন শেখায়।
৫. দ্য প্রিন্স (নিক্কোলো ম্যাকিয়াভেলি)
রেনেসাঁ যুগের এই রাজনৈতিক গ্রন্থটি ক্ষমতার বাস্তবতা নিয়ে লেখা। প্রায়ই নিষ্ঠুর বলে অপবাদ পেলেও এটি মূলত নেতৃত্বের বাস্তব দৃষ্টিকোণ দেখায়—যেখানে টিকে থাকতে কৌশল ও ক্যালকুলেশন জরুরি।
৬. অন টাইরানি: টুয়েন্টি লেসনস ফ্রম দ্য টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি (টিমোথি স্নাইডার)
এই ছোট বইটি ২০টি বাস্তব শিক্ষা দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিরোধের পথ দেখায়। নেতৃত্ব শুধু উচ্চপদস্থ নয়, প্রতিদিনের ছোট সিদ্ধান্তেও নির্ধারিত হয়।
৭. লিডারশিপ অ্যান্ড সেল্ফ-ডিসেপশন (দ্য আর্বিঞ্জার ইনস্টিটিউট)
এই গল্পনির্ভর বইটি দেখায় কিভাবে নেতারা নিজের আত্মপ্রবঞ্চনার কারণে ব্যর্থ হন। এটি শেখায়—মানুষকে সম্মানের চোখে দেখলে ও আত্মজিজ্ঞাসা থাকলে, প্রকৃত নেতৃত্ব গড়ে ওঠে।
৮. এক্সট্রিম ওনারশিপ (জকো উইলিংক এবং লাইফ ব্যাবিন)
দুই নেভি সিল অফিসারের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা এই বই—নেতৃত্ব মানে শতভাগ দায়িত্ব নেওয়া। দোষ চাপানো নয়, বরং জবাবদিহি, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সাহসিকতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
৯. দ্য হার্ড থিং অ্যাবাউট হার্ড থিংস (বেন হরোউইটজ)
উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বাস্তব ও কঠোর বই। সংকটের সময় কঠিন সিদ্ধান্ত কিভাবে নিতে হয়, তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। এটি টিকে থাকার জন্য বাস্তববাদী ও নৈতিক নির্দেশনা দেয়।
১০. দ্য ফাইভ ডিসফাংশনস অব অ্যা টিম (প্যাট্রিক লেনসিওনি)
দলগত কাজের পাঁচটি ব্যর্থতা—বিশ্বাসহীনতা, দ্বন্দ্ব এড়ানো, প্রতিশ্রুতি না রাখা, দায় এড়ানো, এবং লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি। বইটি দলগত সংস্কৃতি গঠনে কার্যকর পদ্ধতি দেয়।
নেতৃত্ব যদি দীর্ঘস্থায়ী ও প্রভাবশালী হয়, তা কখনোই কাকতালীয় নয়। এই ১০টি বই শেখায় কিভাবে সঠিক মূল্যবোধে নেতৃত্ব দিতে হয়—নিজস্বতা হারিয়ে নয়, বরং নৈতিকতা, সহানুভূতি ও শক্ত মনোভাবের সমন্বয়ে। ক্ষমতা গ্রহণের আগে চাই উপলব্ধি, দায়িত্ব গ্রহণের আগে চাই আত্মসমীক্ষা। যারা সত্যিকার অর্থে বদল আনতে চান—নিজে এবং সমাজে, তাদের এই বইগুলো পড়া জরুরি।
সূত্র:https://www.timesnownews.com/lifestyle/books/features/10-books-that-teach-power-responsibility-and-leadership-the-right-way-article-151533655
রবিউল