ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকৃতির সবুজ লীলা ভূমি মধুটিলা ইকোপার্ক

এম. সুরুজ্জামান, সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর 

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১৭ মার্চ ২০২৩; আপডেট: ১২:০৫, ১৭ মার্চ ২০২৩

প্রকৃতির সবুজ লীলা ভূমি মধুটিলা ইকোপার্ক

ইকোপার্ক

প্রকৃতির সবুজ লীলা ভূমি শেরপুর জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’ প্রায় সারাবছর ভ্রমণপিয়াসীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে। সীমান্তবর্তী এই পার্কের চারপাশে উচু নিচু পাহাড়ি টিলা, কৃত্রিম লেক আর সবুজের সমারোহ দেখতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। 

প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবার হাজার হাজার দর্শনার্থী এখানে সমবেত হয়ে বনভোজন বা শিক্ষা সফর করে কর্ম ক্লান্তি ভুলে আনন্দ চিত্তে ফিরে যান নিজগৃহে। তাই ভ্রমণ পিয়াসীরা ইট, কাঠ, কংক্রিট আর পাথরে গড়া নগর জীবনের কোলাহল ছেড়ে ছুটে আসেন এই পার্কে। 

শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার, নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে ভারত সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমেশ্চুড়া বন বীটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে বিগত ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ তথা পিকনিক স্পট। 

এই পার্কটির প্রধান ফটক পেরিয়ে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দুইপাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ি ঢালু রাস্তা। এরপরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্যকন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। 

তারপর কৃত্রিম লেকের উপর ষ্টারব্রিজ। এসব দেখে প্রাণ পায় নব চেতনা, মন হারিয়ে যায় যেন প্রকৃতির মাঝে। লেকের পেডেল বোটে চরে ঘুরাফেরার পর পাহাড়ের চুড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণ পিয়াসীরা। 

কর্তৃপক্ষ জানান, মধুটিলা ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি টিকিট ১০ টাকা, গাড়ী পার্কিং খরচ- বড় বাস ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, সিএনজি ৫০ টাকা ও মোটরসাইকেল ২০ টাকা। এছাড়া এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য (ভ্যাটসহ) ৬ হাজার ৯০০ টাকার বিনিময়ে চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেষ্ট হাউজ রয়েছে। 

এ রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জ অফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশুপাখির ভাষ্কর্য। আরো আছে ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। 

মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ পার্কের আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন নতুন নতুন রাইড স্থাপন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ঝুলন্ত  ব্রিজ, লেক এক্সটেন, মসজিদ নির্মাণ ও অফিস ভবন নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। 

পর্যটকরা বলেন, ইকোপার্কটি জীববৈচিত্র্য ও বিভিন্ন প্রাণীর সমাহার ঘটিয়ে আরো সুন্দর করে সাজানো দরকার। যাতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ প্রকৃতির অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে বারবার এ পার্কে ছুটে আসেন। 

এই ইকোপার্কটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি খুব কাছে থেকে দেখারও সুযোগ রয়েছে এখানে।

রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দুরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর জেলা শহরে আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড অথবা খোয়াপাড় শাপলা চত্তর থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার হয়ে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মটরসাইকেলযোগে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। 

আর নিজস্ব গাড়ীতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর শহরে পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলার বাইপাস সড়কে নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমণ পিয়াসীদের ভিড় যেন লেগেই থাকে। 

এসআর

×