
বয়স তখন পাঁচ কি ছয়। নিঝুম তার বড় বোনের সঙ্গে যুক্ত হন একটি আবৃত্তি সংগঠনে। প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের অধীনে পাঁচ মাস মেয়াদী এ কোর্সে শেখেন আবৃত্তির বুনিয়াদি অনেক নিয়মকানুন। সেই থেকে আবৃত্তির সঙ্গে পথচলা শুরু উম্মে সালমা নিঝুমের। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। যখনই সময় পান, সুযোগ হয় নিঝুম আবৃত্তি অনুশীলন করেন। যে কোন অনুষ্ঠানে বা প্রোগ্রামে আবৃত্তির অংশে নিঝুম থাকে দ্বিধাহীনভাবে। এছাড়া অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন নিঝুমের মনে হলো আবৃত্তি নিয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট বা জ্ঞান প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকেই চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির আবৃত্তি বিভাগে প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে যুক্ত হন তিনি। দুই বছর মেয়াদী এ কোর্সে শেখেন আবৃত্তির আদ্যোপান্ত। এরপর আবৃত্তিটা আরও ভাললাগা শুরু হলো। মনে হলো আবৃত্তি নিয়ে তার আরও কাজ করা দরকার।
তাল, ছন্দের সমন্বয়ে তৈরি হয় আবৃত্তি শিল্প। আবৃত্তি শিল্পের প্রবাহমান সেই ধারাকে সুস্থ ও সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে চায় নিঝুম। নিঝুমের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায়। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই চট্টগ্রাম থাকছেন। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষে। মাঝে মাঝে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) আবৃত্তি ও অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে থাকেন তিনি।
নিঝুম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের সক্রিয় সদস্য। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। সংগঠনটি বিশুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চার নিমিত্তে আয়োজন করে আসছে শুদ্ধ উচ্চারণ, উপস্থাপনা ও আবৃত্তি কর্মশালা। পাশাপাশি প্রতিবছর একক আবৃত্তি প্রতিযোগিতাসহ নিয়মিত বিরতি দিয়ে আয়োজন করে আবৃত্তি উৎসব। এছাড়া প্রমিত উচ্চারণ, উপস্থাপনা ও আবৃত্তির উপর কর্মশালা পরিচালনাসহ নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পালন করে থাকে সংগঠনটি। প্রতিবছর নতুন প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় আবর্তন কর্মশালা।
অনুভূতি প্রকাশ করে নিঝুম বলেন, মায়ের অনুপ্রেরণায় আবৃত্তিকে ভালবাসা। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যখনই মন ভাল থাকে, চর্চা করতে ইচ্ছে করে তখনই কবিতা নিয়ে বসে পড়ি।
নিঝুম বলেন, ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তিকে ভালবাসি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আবৃত্তি মঞ্চের পোস্টার দেখে মনে হয়েছে, আমাকে এটার সঙ্গেই কাজ করতে হবে। ২০১৮ সালে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে যুক্ত হই সেখানে। এরপর সদস্য, এখন সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে এই সংগঠনে আবৃত্তির সঙ্গে। ক্যাম্পাসে আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতেও থাকে আবৃত্তি নিয়ে আলোচনা।