সাদা শুভ্র মেঘগুলো আপন মনে উড়ে বেড়াচ্ছে, খেয়ালি পাখিরা কিচিরমিচির শব্দে দল বেঁধে ছুটে চলছে এ যেন এক অনাবিল আনন্দের বহির্প্রকাশ। নদীর ধারের কাশ ফুলগুলো মাথা নুইয়ে যেন পাখির কলতানকে স্বাগত জানায়। পুরো পরিবেশটাই যেন মন মাতাল করা। রঙ, রূপ, বৈচিত্র্যে মৌলিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। শরত কে পাশ কাটিয়ে দড়জায় কড়া নাড়ছে হেমন্ত। ঋতুর এ পালাবদল মনকে যেমন দোলা দিয়ে যায়, ঠিক তেমনি ফ্যাশন ট্রেন্ডকেও আন্দোলিত করে।
উৎসবপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের সুনাম বিশ্বব্যাপী। যে কোন উৎসবে বাঙালী জাতি এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। উৎসবের আকাশকে করে তোলে রঙিন। উৎসবের আমেজকে আরও বেশি রঙিন করে তুলতে দরজায় কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। জাতিগতভাবে বাঙালীর আলাদা একটা পরিচয় রয়েছে। যে কারণে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হলেও সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ থাকে এতে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এক হয়ে যেতে পারা বাঙালী জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে চারদিকে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। পুজো ম-প থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। বসে নেই ফ্যাশন হাউসগুলোও। পুজোর পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। অন্যবারের তুলনায় এবারের প্রস্তুতি আরও ব্যাপক। চাহিদার রেশটাও বেশ। এ প্রসঙ্গে ডিজাইনার রাতুল হাসান জানান, গতবারের চেয়েও এবারের প্রস্তুতি একটু বেশি। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষ দিন দিন ফ্যাশন সচেতন হয়ে উঠছে। তারই প্রভাব পড়ছে ফ্যাশন ট্রেন্ডে। যে কারণে প্রস্তুতি বেশ আগে থেকেই নিতে হয়। ডিজাইনে খুব বেশি ভেরিয়েশন না থাকলেও কালার কম্বিনেশন চোখে পড়ার মতো। তাছাড়া ডিজাইনে একটু গর্জিয়াস ভাবও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। অন্যবারের তুলনায় এবার প্রোডাক্ট আইটেম বেশি। যেমন অন্যান্য বারে পুজোর পোশাক শাড়ি-পাঞ্জাবিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবারের পরিধি ব্যাপক। শাড়ি, পাঞ্জাবি ছাড়াও এবারের পুজোর ফ্যাশন ট্রেন্ডে শর্ট পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট এবং কুর্তাতে পুজোর আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আর বর্তমান সময়ে ঋতুভিত্তিক পোশাকের আলাদা একটা চাহিদা রয়েছে। যে কারণে ফ্যাশন হাউসগুলো ঋতুভিত্তিক পোশাক তৈরিতে বাড়তি মনোযোগ দেয়। যে কারণে এ ধরনের পোশাকও চোখে পড়ে হরহামেশা। তবে একেক ঋতুর রঙ-রূপ একেক রকম। আর পোশাক তৈরিতে এ রঙ-রূপকেই প্রাধান্য দেয় ফ্যাশন হাউসগুলো। প্রকৃতিতে বইছে শরতের হাওয়া। শুভ্র কাশবন আর সাদা মেঘের ভেলাকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করা হয় শরতের পোশাক। যে ডিজাইনে প্রাধান্য পায় সাদা রং। তবে অন্যান্য কালারের কম্বিনেশনও থাকছে। এ প্রসঙ্গে ডিজাইনার জাহিদ আকরাম জানান, একেক ঋতুতে একেক ডিজাইন এবং কালার ডিমান্ড করে। সেদিক মাথায় রেখেই ড্রেস ডিজাইন করে থাকি। এই শরতেও থাকছে ডিজাইন ভেরিয়েশন। ঋতুভিত্তিক পোশাকগুলো সাধারণত তরুণ প্রজন্মকেই বেশি আকৃষ্ট করে। সে কারণে তাদের রুচি ও পছন্দকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশি। এ ছাড়া সব বয়সীর জন্যও থাকছে আকর্ষণীয় শারদীয় পোশাক। পোশাকের ধারা গতানুগতিক থাকলেও ডিজাইনে রয়েছে। সাদা, অফ হোয়াইট বা ক্রিম কালারের কাপড়ের সঙ্গে লাল, গোলাপি এবং মেজেন্ডা রং ম্যাচ করে তৈরি করা হয়েছে সালোয়ার কামিজ এবং শর্ট পাঞ্জাবি। থাকছে হাতের কাজ, এ্যাপ্লিক, ব্লক, এবং হ্যান্ড স্প্রে’র সমন্বয়। ফতুয়ার ভেরিয়েশনও চোখে পড়ার মতো। কাশফুলের সিম্বলিক হ্যান্ড পেইন্ট দ্যুতি ছড়াবে আপন মহিমায়। সবচেয়ে বেশি ভেরিয়েশন রয়েছে টি-শার্টে। স্ক্রিন প্রিন্ট, কিংবা স্কেচ করা বিভিন্ন ডিজাইন ক্রেতাদের সহজেই আকৃষ্ট করবে। তরুণ প্রজন্ম টি-শার্টের বেশ ভক্ত।
কিছুদিন পরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবটি শারদীয় উৎসবের আওতাভুক্ত। অনেকেই শরতের পোশাকটি শারদীয় উৎসবের জন্যও সংগ্রহ করে থাকেন। এ কারণে ফ্যাশন হাউসগুলোও শারদীয় পোশাকের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সিম্পল ডিজাইন থেকে শুরু করে গর্জিয়াস ড্রেস পর্যন্ত মিলবে হাউসগুলোতে। কাপড়, রঙ এবং ডিজাইনের ওপর নির্ভর করছে পোশাকের দাম। সিম্পল শাড়ি মিলবে ৮০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকায়। গর্জিয়াস শাড়ি পাওয়া যাবে ১৫০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকায়। শার্ট ৪০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, ফতুয়া ৩৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, শর্ট পাঞ্জাবি ৬০০ টাকা থেকে ১৪৫০ টাকা। টি-শার্টের মূল্য পড়বে ২০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। সালোয়ার কামিজ ১২৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা, টপস ৪০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। শরতের আকাশ আরও বেশি বর্ণিল করে তুলবে শরতকেন্দ্রিক এই পোশাকগুলো। স্নিগ্ধ পরিবেশে যা আপনাকে করে তুলবে আরও বেশি মোহনীয়, আরও বেশি আকর্ষণীয়। আর ফুটিয়ে তুলবে আপনার রুচি।