
ছবি: সংগৃহীত।
গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত ঘটনা। অনেক সময় এসব যানবাহনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও হারিয়ে যায়, যার ফলে মালিককে পড়তে হয় জটিল আইনি জটিলতা ও দৌড়ঝাঁপে। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত নিয়ম মেনে কাজ করলে এই প্রক্রিয়া অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হয়।
নিম্নে গাড়ি চুরি বা হারিয়ে গেলে করণীয় ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলো:
প্রথম ধাপ: জিডি করতে হবে নিকটস্থ থানায়:
যদি কোনো গাড়ি বা বাইক হারিয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে গাড়ির কাগজপত্রও হারায়, তাহলে সবার আগে ঘটনার স্থান অনুসারে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। জিডি করার সময় গাড়ির নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বর ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করতে হবে। জিডির একটি কপি অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে, যা পরবর্তী সব ধাপে প্রয়োজন হবে।
দ্বিতীয় ধাপ: ট্রাফিক অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ:
জিডির কপি নিয়ে নিকটস্থ ট্রাফিক অফিসে যেতে হবে এবং গাড়ির নামে কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট আছে কি না তা যাচাই করতে হবে। যদি কোনো মামলা না থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট অফিস একটি ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করবে, যেখানে লেখা থাকবে "গাড়িটির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই"।
তৃতীয় ধাপ: বিআরটিএতে আবেদন জমা:
ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স ও জিডির কপি নিয়ে বিআরটিএ অফিসে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে একটি আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিতে হবে। আবেদনে উল্লেখ করতে হবে—গাড়ির যাবতীয় কাগজপত্র হারিয়ে গেছে এবং নতুন কাগজ চাচ্ছেন। আবেদনপত্রে গাড়ির নাম্বার, ইঞ্জিন নম্বর ও মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য থাকতে হবে।
চতুর্থ ধাপ: ফি জমা ও রশিদ সংগ্রহ:
নতুন কাগজপত্র পেতে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হয়। বিআরটিএ-নির্ধারিত ব্যাংকে এই ফি জমা দিতে হবে এবং ব্যাংক থেকে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে। এই রশিদও আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
পঞ্চম ধাপ: নথিপত্র জমা ও অপেক্ষা:
জিডি কপি, ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স, আবেদনপত্র ও ব্যাংক রশিদ একসঙ্গে বিআরটিএ অফিসে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার পরে আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস আসবে, যেখানে কবে কাগজ প্রস্তুত হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। নির্ধারিত দিনে বিআরটিএ অফিসে গিয়ে আপনি নতুন কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন।
যদি গাড়ি চুরি হয় সেক্ষেত্রে করণীয়:
যদি গাড়ি বা বাইক চুরি হয়ে থাকে, তবে জিডি নয়, সরাসরি মামলা করতে হবে। মামলার সময় ঘটনার স্থান নির্ধারণ করে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হবে। যদি সিসিটিভি ফুটেজ থাকে বা কোনো প্রত্যক্ষদর্শী থাকে, তাদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) প্রয়োজনে প্রযুক্তিগত সহায়তা ব্যবহার করে গাড়ি উদ্ধারের চেষ্টা করবেন।
অনেকে নিয়ম না জানার কারণে ভুল করে বসেন এবং এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ঘুরতে হয়, যা হয়রানির সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে জিডি না করেই বিআরটিএ অফিসে চলে যান, আবার কেউ ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স না নিয়েই আবেদন করেন—ফলে কাজের গতি ব্যাহত হয়।
গাড়ি বা বাইক হারিয়ে গেলে নির্ধারিত নিয়মে ধাপে ধাপে কাজ করলে ঝামেলা অনেকটাই এড়ানো যায়। থানায় জিডি, ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্স, বিআরটিএতে আবেদন ও ফি জমা—এই চারটি ধাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করলেই নতুন কাগজপত্র পাওয়া সহজ হয়। আর যদি গাড়ি চুরি হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই মামলা করতে হবে এবং পুলিশকে যথাযথ তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
মিরাজ খান