
.
‘অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ার সময় কয়েকজন মিলে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। কিছুদিন পর মনে হলো অনার্সের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে এমবিএ করবেন। তখন অনেকেই নিরুৎসাহিত করেন। ওই সময় ৩য় বর্ষের পরীক্ষাও শুরু হয়ে যায়। পরীক্ষা শেষে ব্যাংকের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আর তখন থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির স্বপ্নে বিভোর হন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের প্রতি আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে’- জানান মো. ইমরান উদ্দিন চৌধুরী। সিলেটের জকিগঞ্জ থানার ইছামতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং জকিগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। সিলেট এমসি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ (২০২২ ব্যাচ) পদে চাকরি। ইমরান বলেন- ‘নিজের অনেক চেষ্টা এবং আল্লাহর রহমতে এ জায়গায় আসতে পেরেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম পরীক্ষা দিয়েছিলাম অফিসার (জেনারেল) পদে। সেখানে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলাম। তাই নিজের ভেতর একটা জেদ ঢুকে যায়। ঢাকা থেকে সিলেট ফেরার পথে বাসে বসেই প্রতিজ্ঞা করি বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকরি করবই’।
আইবিএর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় গণিত এবং ইংরেজি শেষ করে ফেলেছিলেন ইমরান। ইংরেজি ব্যাকরণের বেসিক খুব একটা ভালো না থাকায় তাতে প্রচুর সময় দিয়ে নিজেকে মজবুত একটা অবস্থানে নিয়ে এসেছিলেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে প্রস্তুতি শুরু করেন। টানা ৬ মাস শুধু গণিত করেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত টানা ৮ ঘণ্টা পড়ার জন্য সময় দিয়েছেন। লাইব্রেরিতে নিয়মিত পত্রিকা পড়া এবং বিশেষ করে সম্পাদকীয় অংশ ভালো করে দেখতেন। ইমরানের মতে, পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগটি সব শিক্ষার্থীর পড়া উচিত। এছাড়াও ইমরান নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতেন। মডেল টেস্ট দেওয়ার কারণে তার প্রশ্ন সমাধান করার ক্ষমতা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে। পাশাপাশি সময়কেও খুব কাজে লাগিয়েছিলেন। দিনে লাইব্রেরিতে রাতে বাসায় পড়তেন।
ইমরান বলেন, ‘আমার একটা খাতা ছিল, যার ওপরে লেখা ছিল ‘রোড টু বিবি এডি’। খাতার মধ্যে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর নোট করে রাখতাম। প্রতি শুক্রবার পুরো এক সপ্তাহের নোট পড়তাম। খাতাটি বেশ সাহায্য করেছে। সাধারণ জ্ঞান আমার কাছে খুব মজার বিষয় ছিল। একটা সিরিজের বই বেশ ভালো করে পড়ে ফেলেছিলাম। একটা সময় যখন লাইব্রেরিতে পড়তে যেতাম, তখন অনেকে আমাকে সাধারণ জ্ঞান, বাংলা সাহিত্য এবং ইংরেজি সাহিত্য থেকে অনেক প্রশ্ন করতেন। আমি সব প্রশ্নের উত্তর নিমিষেই দিয়ে দিতাম। তাই অনেকে মজা করে আমাকে ডাকতো জীবন্ত উইকিপিডিয়া’।
ভালো চাকরির জন্য ভালো প্রস্তুতির বিকল্প নেই। আর ভালো প্রস্তুতির জন্য অবশ্যই বেশি করে সময় দিতে হয়। ইমরান ব্যাংকের জন্য পড়াশোনায় প্রচুর সময় দিয়েছেন। তবে শুধু ব্যাংকের প্রস্তুতি নয়, সাথে বিসিএসের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। ইমরান বলেন, ‘আমি ৪০তম ও ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডার এবং ৪৩তম বিসিএসের ভাইভা দিয়েছি। সব মিলিয়ে বলতে হয়, আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আর রিজিকের মালিক মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন’।
পরিবারের অনুপ্রেরণাই তার এতদূর আসার সবচেয়ে বড় শক্তি। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ইমরান পারিবারিক কোনো কাজ করেননি, এরকমও দিন গিয়েছে বাসা থেকে বেরই হননি সারাদিন। মো. ইমরান উদ্দিন চৌধুরী বলেন- ‘আমি আমার পরিবারের কাছে আজন্ম ঋণী। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর নানি আর খালা-মামাদের কাছেই আমার বড় হওয়া। তারাই আমার আসল পরিবার। তাদের দেওয়া পারিবারিক শিক্ষা আমার হাতেখড়ি। তারাই আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন’।
বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি পেতে নতুনদের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘সর্বপ্রথম পরামর্শ হলো চোখ-কান খোলা রেখে পড়তে হবে। মুখস্থ না করে বুঝে পড়তে হবে। যারা একেবারেই নতুন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা প্রথমে একটি প্রশ্ন ব্যাংক কিনে প্রশ্ন সমাধান করেন। প্রশ্ন সমাধান করলে ব্যাংকের পরীক্ষার ধরন সম্পর্কে ধারণা হবে। বেশি বেশি করে পত্রিকা পড়বেন। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি একটি পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করবেন এবং অনুবাদ করবেন নিজের মতো করে। বেশি করে মডেল টেস্ট দেবেন। একদম প্রস্তুতির শুরু থেকেই মডেল টেস্ট দেবেন। অনেকের ধারণা, মডেল টেস্ট দিতে হয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হওয়ার পর। কিন্তু শুরু থেকেই মডেল টেস্ট দেওয়া শুরু করলে আপনার নিজের অবস্থান আপনি নিজেই জানতে পারবেন। মডেল টেস্ট থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর নোট করে রাখবেন। যাতে চোখ বোলালেই মনে পড়ে যায়। যারা গণিতে দুর্বল তাদের অবশ্যই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। গণিত ছাড়া ব্যাংকের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকে থাকা বেশ কষ্টসাধ্য।
চাকরি বাজার ডেস্ক
প্যানেল