ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ের পরে বিসিএস

ফারজানার গল্প

চাকরি বাজার ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:২৯, ১৭ মার্চ ২০২৩

ফারজানার গল্প

উম্মে হাবিবা ফারজানা

জীবনে প্রথম বিসিএস দিয়েই সফল হন উম্মে হাবিবা ফারজানা। সুপারিশপ্রাপ্ত হন ৩৭তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে। বর্তমানে তিনি মাদারীপুরে কর্মরত আছেন। তবে তাঁর সেই বিসিএস জয়ের গল্পটা সহজ ছিল না। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। পিরোজপুরের মেয়ে ফারজানা বাবার চাকরিসূত্রে বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। আর পড়াশোনা করেছেন নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। বরাবরই প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি।

২০০৫ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর স্বপ্নগুলো ডানা মেলার আগেই তাঁকে বাবা-মায়ের ইচ্ছেতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বেসরকারি চাকরিতে কর্মরত মো. মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের পর তাঁর সফলতার পথে কিছুটা ছেদ পড়ে। স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যেতে থাকে। তবে স্বপ্নভঙ্গের আগেই তিনি আবার ঘুরেও দাঁড়ান।

সংসার সামলিয়েই পড়াশোনা, শ্বশুরবাড়ির সবকিছু ম্যানেজ করে চলেছেন। যুদ্ধ জয়ের মতোই ছিল অনেকটা। প্রায় চার বছর পড়ালেখা থেকে বিচ্ছিন্নও ছিলেন। এতকিছুর পরও অদম্য ইচ্ছা আর অধ্যবসায়ের জন্য তিনি মাদারীপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যোগ দিতে পেরেছেন।
ফারজানা বলেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছেতেই মূলত পড়াশোনা শুরু করেছি। প্রথমদিকে কেউ তেমন সহযোগিতা করেনি। অনেকে বলেছে স্বামী ভালো ইনকাম করে, আবার বউয়ের চাকরি করার কি দরকার! আজ আমি সফল হয়েছি বলে তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। হয়ত সফল না হলে অন্যরকম বলতেন। আমাকে নিয়ে আসলে তেমন কেউ স্বপ্ন দেখেননি, আমি নিজেই আমার স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বপ্নের বাস্তবায়নকারী।

এ জন্য আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। তবে আমার স্বামী আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। আমি যেন পড়াশোনায় সময় পাই, সে বিষয়ে খেয়াল রেখেছেন।’ মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার সময় আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন ফারজানা। কন্যার জন্মের পরই শুরু হয় তাঁর প্রকৃত জীবন সংগ্রাম। সন্তান হওয়ার পর চার বছর তিনি পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যান। এ সময় বন্ধুদের ক্যারিয়ার দেখে তিনি বিসিএস দেওয়ার কথা চিন্তা করেন।

মূলত বন্ধুদের বিসিএস ক্যাডার হওয়াই তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে নতুন করে পড়া শুরু করতে। ফারজানা জানালেন, লিখিত পরীক্ষার আগে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দেড় মাস। সে সময় স্বামী, মা ও বোনের কাছ থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সময় তারা মা-মেয়ে চিকেন পক্সে আক্রান্ত হন। অসুস্থ অবস্থায়ই পরীক্ষায় অংশ নেন। উত্তীর্ণও হন। পরের দেড় মাস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। সেখানে সফলতার পর ভাইভাতেও সফল হন ফারজানা। তাঁর মতে, সফলতার জন্য নারীদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস।

আমি মানুষ, আমার একটা আলাদা সত্তা রয়েছে। আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। আর এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিশ্রম। সে বিষয়ে কখনই পিছপা হওয়া যাবে না। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফারজানা বলেন, ‘থেমে গেলে চলবে না। ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে, বিশ্বাস রাখতে হবে। যে সময়টা পাওয়া যায় তার পুরোটার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। আর পড়াশোনা চলাকালে সব রকম ডিভাইস থেকে দূরে থেকে একাগ্রচিত্তে প্রাপ্ত সময়টা লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করলে সফলতা আসবেই।’
সারা জীবন শুধু স্বপ্নই দেখে যাবেন, আর প্রাপ্ত বয়সে বলবেন, আমিও চেয়েছিলাম, হয়নি। তাহলে তো হবে না। এমন হাজারো ফারজানার জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার গল্প থেকে হলেও প্রেরণা নিয়ে আজ থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে তৈরি করতে শুরু করুন নিজেকে। সফলতা আপনাকে ধরা  দেবেই।
চাকরি বাজার ডেস্ক
 

×