ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচটি ধাপ উত্তীর্ণ হয়েই ব্যাংকার

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২ ডিসেম্বর ২০২২

পাঁচটি ধাপ উত্তীর্ণ হয়েই ব্যাংকার

সাফানুর সিফাত

সিফাত বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। আমার ইচ্ছা পূরণের জন্য আব্বু-আম্মু  হয়তো কষ্ট হলেও প্রাইভেটে পড়াতেন, কিন্তু ইচ্ছে হয়নি। নিজের অযোগ্যতা বাবা মায়ের কষ্টের টাকায় ঢাকব কেন? তাই ভর্তি হলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে সিরিয়াল আগে থাকায় ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ে ভর্তি হলাম। ফাইন্যান্স পড়তে খারাপ লাগত না।

কিন্তু কখনো ব্যাংকিংয়ে ইন্টারেস্ট পাইনি। ফাইন্যান্স পড়তে পড়তে ভাবলাম হয় ফাইন্যান্সিয়াল ব্রোকার হব, আর নয়তো কোনো একটা ভালো কোম্পানির ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে জব করব। কিন্তু আল্লাহ আমার জন্য অন্য কোনো পরিকল্পনা রেখেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শখ মিটাতে এমবিএ করতে গেলাম, সেখানে চান্স পেলাম ব্যাংকিংয়ে।

এরপর একটা এমএনসিতে ইন্টার্নশিপ করলেও এমবিএ’র ক্লাসে সমস্যা হওয়ায় সেটা আর করা হয়নি। পড়াশোনার পাশাপাশি জব খুঁজছিলাম। তখন একদিন আইএফআইসি ব্যাংকের জব সার্কুলার দেখে অনেকটা কোনো কিছু না ভেবেই দরখাস্ত করি। আবেদন করার পর ৫টা ধাপ পেরিয়ে চাকরিটা পেয়েও যাই। নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে আর ফ্যামিলিকে একটু সাপোর্ট দিতে এই চাকরিটা আমাকে ভীষণ সাহায্য করছে।

এভাবেই ইচ্ছা না থাকলেও শেষ পর্যন্ত একজন ব্যাংকারই হলাম। চাকরিটা যে খুব একটা উপভোগ করছিলাম তা না। মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে ছেড়ে দিব, অন্য কিছু করব। কিন্তু আবার এটাও মনে হয় আল্লাহ আমাকে এখানে এনে ফেলেছেন নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ আছে। অফিসে ভালো অফিসার হিসেবে আমার একটু হলেও সুনাম আছে।

আমার বস আমার ওপর অনেকটা ভরসা করেন। হয়ত এটাই আমার জন্য ভালো। আমার ভালো  তো আমার চেয়ে আল্লাহই ভালো বুঝেন তাই না! তাই দিন শেষে আমি একজন ব্যাংকার।’
প্রশ্ন : আবেদন করার পরের ৫টি ধাপ- কী কী, আর কিভাবে সেগুলোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
উত্তর : প্রথমে ছিল প্রিলিমিনারি। সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তাই এটা পার করতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি। এরপর ছিল প্রাথমিক ভাইভা, সেখানে আমার সাবজেক্ট রিলেটেড প্রশ্ন করেছিল। ফাইন্যান্স আর ব্যাংকিং নিয়েই পড়াশোনা করায় এই ধাপটাও পার হয়ে যাই। মজার ব্যাপার হলো ভাইভায় আমাকে ওঋওঈ- এর পূর্ণরূপ জিজ্ঞেস করেছিল।

কিন্তু আমি বলতে পারিনি, তাও আমাকে নেওয়ায় সেটা একটা বিস্ময় আমার কাছে। এরপর ছিল লিখিত পরীক্ষা। অঙ্ক আর ইংরেজিতে মোটামুটি ভালো ছিলাম। তাই এটা পার করতেও কষ্ট হয়নি খুব একটা। লিখিত পরীক্ষার পর ছিল কম্পিউটার টেস্ট। এই টেস্টটা খুব ভালো দেইনি, টাইম লিমিট দেওয়া থাকায় আর বুঝতে না পারার জন্য পুরোটা উত্তর করতে পারিনি। এর পর ভয়ে ছিলাম যে চাকরিটা বুঝি আর হলো না।

কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই ধাপও উৎরে গেলাম। তারপর এলো ফাইনাল ভাইভা। আর্মির এক্স মেজর আমাদের মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান। চেহারায়, কথায়, ভাবে পুরাই গুরুগম্ভীর। চোখের দিকে তাকালেই আত্মা কাঁপে এমন। বাসা কোথায়, বাসায়  কে কে থাকে, ঢাকার বাইরে পোস্টিং দিলে যাব কিনা- এসব জিজ্ঞেস করার পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘যিধঃ রং ুড়ঁৎ ভধঃযবৎ?’ আমি ভয়ে তালগোল পাকিয়ে বাবা কি করেন না বলে বাবার নাম বলছি।

স্যার মুচকি হেসে আবার প্রশ্নটা করলেন। তখন আমার হুঁশ হলো। বাসায় এসে ভাবলাম শেষ, এই চাকরি আর আমার কপালে নেই। কিন্তু কয়দিন পর টুক করে ম্যাসেজ আসল যে আমি আইএফআইসি ব্যাংকের টিএসও পদের জন্য সিলেক্টেড।
প্রশ্ন : ফাইনাল ভাইভায় আর কী কী প্রশ্ন করেছিল, আর কিভাবে উত্তর দিয়েছেন?
উত্তর : বাসা কোথায়, বাসায় কে কে থাকে, বাবা কি করেন, বাবার মাসিক আয় কত, মা কি করেন, ঢাকার বাইরে যাব কিনা। আইএফআইসিতে জব কেন করতে চাই? ফাইনাল ভাইভায় পড়াশোনা বা সাবজেক্ট রিলেটেড কোনো প্রশ্ন করেনি। বলেছি যে, ঢাকার বাইরে যেতে আপত্তি নেই, ওটা তো আমার চাকরিরই অংশ।

আর আইএফআইসিতে কেন জব করতে চাই- প্রথম কারণ আমি এই মুহূর্তে একটা চাকরি খুঁজছি এবং আইএফআইসি জব অফার করেছে। দ্বিতীয় কারণ হলো আইএফআইসি একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক, এখানে জব করাটা আমার ক্যারিয়ার গঠনে সহায়ক হবে।
যারা ব্যাংকে চাকরি করতে চান তাদের জন্য সিফাত বলেন, ‘বাণিজ্যের বিষয়গুলো ব্যাংকের চাকরির জন্য বেশি সহায়ক। তবে অন্য বিষয় হলেও সমস্যা নেই। শুধু সেই বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। পড়তে হবে, জানতে হবে, নিজের বেসিকটা তৈরি করে নিতে হবে।

শুধু সাবজেক্ট নিয়ে কোনোরকমে পড়ে পাস করলে হবে না।’ আর অবশ্যই অঙ্ক, ইংরেজি আর আইটিতে ভালো হতে হবে। ব্যাংকের প্রশ্নগুলো ইংরেজিতেই হয়। প্রয়োজন কঠোর অধ্যবসায়, দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস। তাহলে দিন শেষে আপনিও নিজেকে একজন ব্যাংকার হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন।

×