ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়াতে হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা

প্রকাশিত: ২১:০০, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:০২, ২৮ জুলাই ২০২৫

পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়াতে হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় রাতের ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষমেশ প্রিয় দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। শুধু হাসিনা নন, তার পথ অনুসরণ করে নরেন্দ্র মোদীর দেশ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন আরও অনেক আওয়ামী লীগ নেতা—যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে গণহত্যার অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের ভূমিকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদি সরকারকে কড়া ভাষায় তুলোধুনো করেছেন তিনি।

ভারতের আয়তন ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ বর্গকিলোমিটার। এই দেশকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্ত করতে লেগেছিল প্রায় ২০০ বছর। লাখো শহীদের আত্মদানে স্বাধীন হওয়া এই ভূমিতে এখন আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে গণহত্যা পরিচালনাকারী নেতাদের—এমন মন্তব্য করে মোদির উপর বেজায় চটেছেন পশ্চিমবঙ্গের এই অভিজ্ঞ নেত্রী।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের এক জনসভায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা আর কূটনৈতিক ভণিতা করেননি। বরং একেবারে স্পষ্ট ভাষায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তিনি। নাম না করেই ইঙ্গিত করেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত শাসক গোষ্ঠীর একাংশ বর্তমানে কলকাতায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছে। আর এই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার পেছনে রয়েছে দিল্লির ইশারা।

“আমি তো কিছু বলিনি,”—এই কথার মাধ্যমে বক্তব্য শুরু করলেও পরক্ষণেই মমতা বলেন, “ভারত সরকার কিছু অতিথিকে সরকারি অতিথি হিসেবে রেখেছে। পার্শ্ববর্তী দেশে সমস্যা হয়েছে বলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে—এটাও এক ধরনের রাজনৈতিক কারণ।” তার এই বক্তব্যে স্পষ্ট, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠেছে এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যার পেছনে কাজ করছে দিল্লির দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক কৌশল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কূটনীতির ছায়ায় এখন এক ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক খেলা চলছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার মঞ্চ হিসেবে।

এদিকে, বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নির্মম “জুলাই আন্দোলন”-এ ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানোর নির্দেশদাতা হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ছোট বোন শেখ রেহানাও। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদেরও ভারতে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে সরাসরি সাক্ষাৎকার দিতেও দেখা গেছে।

সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে—গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদেরকে ভারতের আশ্রয় দেওয়া কি শুধুই কূটনৈতিক সৌজন্য, না কি এর পেছনে রয়েছে বৃহৎ রাজনৈতিক কৌশল?

শেখ ফরিদ

×