ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির অভিযোগ, রয়টার্সের প্রতিবেদনে ইউএসএইড’র বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০১:০৯, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:১০, ২৭ জুলাই ২০২৫

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরির অভিযোগ, রয়টার্সের প্রতিবেদনে ইউএসএইড’র বিশ্লেষণ

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় মার্কিন অর্থায়নে সরবরাহকৃত মানবিক সহায়তা হামাস নিয়মিত চুরি করছে—ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ তুললেও, সম্প্রতি এক মার্কিন সরকারি বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণাটি মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড’র (USAID) একটি শাখা জুনের শেষ দিকে সম্পন্ন করে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ১৫৬টি সহায়তা চুরি বা হারানোর ঘটনা পর্যালোচনা করে তারা জানায়, ‘কোনো রিপোর্টে দেখা যায়নি যে হামাস সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এই মার্কিন সহায়তা থেকে লাভবান হয়েছে।"

মার্কিন অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে বিস্ফোরক তথ্য

সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এই অপ্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ঘটনাগুলোর মধ্যে ৪৪টি সহায়তা হারানোর পেছনে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড দায়ী ছিল। এর মধ্যে ১১টি ঘটনায় ইসরায়েলি হামলা বা জোরপূর্বক এলাকাবাসীকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ ছিল।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দাবি করেছে, হামাসের সহায়তা লুটের ভিডিওপ্রমাণ রয়েছে—যদিও তারা কোনো ভিডিও সরবরাহ করেনি। তারা এমনকি মানবিক সহায়তা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি গোপন করার’ অভিযোগও তোলে।

হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র এই গবেষণার অস্তিত্বই অস্বীকার করে বলেন, “এটি সম্ভবত ট্রাম্পবিরোধী ‘ডিপ স্টেট’ কর্মকর্তা দ্বারা তৈরি হয়েছে।”

জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ২১ লাখ মানুষের এক-চতুর্থাংশ এখন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মুখে। হাজার হাজার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় খাদ্য সংগ্রহে যাওয়া ১,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যার অধিকাংশই গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (GHF) বিতরণকেন্দ্রের কাছে ছিল।

GHF একটি নতুন বেসরকারি ত্রাণ সংস্থা, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা এবং সাবেক মার্কিন সেনাদের পরিচালিত একটি মুনাফাভিত্তিক লজিস্টিক ফার্ম দ্বারা পরিচালিত।

ইসরায়েল বলছে: হামাস সাহায্য লুট করছে, হামাস বলছে: রক্ষা করতে গিয়ে শত শত পুলিশ নিহত

ইসরায়েলের দাবি, হামাস গোপনে ও প্রকাশ্যে ত্রাণকাফেলায় প্রবেশ করে সহায়তা লুট করছে এবং পরে এসব সামগ্রী বিক্রি করে জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে।

তবে হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা জাতিসংঘের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ রক্ষায় কাজ করছিল এবং এতে ৮০০-রও বেশি পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছে।

রিটার্স স্বাধীনভাবে কোনো পক্ষের দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি, কারণ ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে সহায়তা চুরির কোনো প্রকাশ্য প্রমাণ এখনো দেয়নি।

সহায়তা চুরির ১৫৬ ঘটনার বিশ্লেষণ

  • ৬৩টি ঘটনায় অপরাধী চিহ্নিত করা যায়নি
  • ৩৫টি ঘটনার পেছনে সশস্ত্র ব্যক্তিরা জড়িত
  • ২৫টি ঘটনায় নিরস্ত্র ব্যক্তিরা দায়ী
  • ১১টি সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত
  • ১১টি দুর্নীতিগ্রস্ত সাব-কন্ট্রাক্টরদের দ্বারা
  • ৫টি ঘটনায় সহায়তা কর্মীরা নিজেই দুর্নীতিতে জড়িত
  • ৬টি ঘটনা ‘অনির্ধারিত’ ক্যাটাগরিতে

মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড বলছে, ‘কোনো ঘটনাতেই হামাস বা অন্য কোনো মার্কিন নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ পাওয়া যায়নি।’

সহায়তা নিয়ন্ত্রণে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর বিতর্কিত ভূমিকা

GHF দাবি করে, তারা হামাসের নিয়ন্ত্রণ থেকে সহায়তা বিতরণকে মুক্ত করেছে। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা GHF-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের মতে, GHF আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার নিরপেক্ষতার নীতিমালাকে লঙ্ঘন করছে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি GHF-কে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যেখানে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সংস্থাগুলোকে কর্মী ও সরবরাহকারীদের চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা যাচাই করতে হয়—কিন্তু GHF-এর ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে।

ইউএসএইড এর এই তদন্ত প্রতিবেদন নতুন করে প্রশ্ন তোলে, গাজায় চলমান মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে প্রকৃত বাধা কোথায়? দায়ী কে—হামাস, ইসরায়েল, নাকি ভেঙে ফেলা সহায়তা কাঠামো নিজেই?

 

সূত্র: এনবিসি নিউজ।

রাকিব

×