ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্পের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউজে পাঁচ আফ্রিকান নেতার উপস্থিতি

প্রকাশিত: ০২:১৮, ১১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০২:২১, ১১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্পের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউজে পাঁচ আফ্রিকান নেতার উপস্থিতি

ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু, মানবাধিকার বা দাতব্য সাহায্য নয়—ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহ এখন আফ্রিকার খনিজ ও বাণিজ্যে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প এবার হোয়াইট হাউজে পাঁচ আফ্রিকান দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এক নতুন কূটনৈতিক বার্তা দিলেন। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন গাবন, গিনি-বিসাউ, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া ও সেনেগালের নেতারা—যাঁরা প্রত্যেকেই তাদের দেশের সম্পদ ও সম্ভাবনা নিয়ে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দরজায়।

‘ট্রেড, নট এইড’: ট্রাম্পের কৌশল বদলের বার্তা
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতিমালায় উন্নয়ন সহযোগিতা বা দাতব্য সহায়তা জায়গা হারাচ্ছে। তার বদলে এসেছে সরাসরি বিনিয়োগ ও খনিজ সম্পদ নিয়ে দরকষাকষি। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা, বিশেষত যেসব আফ্রিকান দেশ ১০ শতাংশ আমদানি শুল্কের মুখোমুখি, তারা চাইছে এই হার কমাতে।

নেতাদের প্রশংসায় মুখর আফ্রিকান রাষ্ট্রপ্রধানরা
হোয়াইট হাউজের মধ্যাহ্নভোজে সেনেগালের প্রেসিডেন্ট বাসিরু ফায়ে ট্রাম্পকে গল্ফ মাঠ বানানোর আমন্ত্রণ জানালেন। মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘাজওয়ানি ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রুয়ান্ডা-কঙ্গো শান্তিচুক্তির প্রশংসা করে তাঁকে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার যোগ্য বলেও উল্লেখ করেন। গাবনের প্রেসিডেন্ট বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা যদি না আসেন, অন্য কেউ এসে যাবে।”

খনিজ সম্পদ ও ভৌগোলিক গুরুত্ব
সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় ছিল প্রাকৃতিক সম্পদ—বিশেষ করে তেল, গ্যাস, ইউরেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও বিরল খনিজ। গাবনের মতো দেশ চায় আমেরিকা সেখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করুক, কারণ গালফ অব গিনি অঞ্চলে জলদস্যুতা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গাবন একাই বিশ্বের মোট ম্যাঙ্গানিজ মজুদের এক-চতুর্থাংশ ধারণ করে।

ভিসা নীতির অনিশ্চয়তা ও অভিবাসন আলোচনার কেন্দ্রে
সেনেগাল ও মৌরিতানিয়া থেকে হাজার হাজার তরুণ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিচ্ছে। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। লাইবেরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চায় ফিরিয়ে দেওয়া ব্যক্তিদের গ্রহণে রাজি করাতে, এমনকি দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও। অথচ ট্রাম্পের তহবিল কেটে দেওয়ায় লাইবেরিয়ার স্বাস্থ্যখাতে বড় ধাক্কা লেগেছে—যেখানে আগে ৪৮% বাজেটই আসতো মার্কিন সহায়তা থেকে।

রাজনীতি ও ভূকৌশল: চীনের প্রভাব ঠেকানোও একটি উদ্দেশ্য
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের আফ্রিকা উদ্যোগ এক ধরনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে। এশীয় শক্তিগুলো আফ্রিকার খনিজ ও অবকাঠামো খাতে বিশাল বিনিয়োগ করছে। ট্রাম্প চাইছেন এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের দখল বাড়াতে।

‘কে কাকে দরকার?’ – সমঝোতার খেলা
সব মিলিয়ে এটা ছিল কৌশলগত এক আলোচনার মঞ্চ, যেখানে আফ্রিকান নেতারা চেয়েছেন বিনিয়োগ আর ট্রাম্প চেয়েছেন সম্পদ ও রাজনৈতিক সুবিধা। তারা জানেন, ভুল হিসাব হলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তাদের দেশও পড়তে পারে শুল্ক-নির্যাতনের মুখে—যেখানে সম্প্রতি মার্কিন আমদানির উপর ৩০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।


ট্রাম্পের আমন্ত্রণে আফ্রিকার পাঁচ দেশের এই সফর কেবল একটি কূটনৈতিক সৌজন্য সফর নয়—এটি এক নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। যেখানে সাহায্যের চেয়ে বিনিয়োগ, এবং প্রতিশ্রুতির চেয়ে পারফরম্যান্সের ওপর জোর বেশি। এবার শুধু প্রশ্ন, এই দরকষাকষিতে কে আসল জয়ী হবে—হোয়াইট হাউজ, নাকি আফ্রিকার খনিজ-সমৃদ্ধ ক্ষুদ্র অর্থনীতি?

 

শেখ ফরিদ

×