
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করছে—যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে এর কোনো প্রমাণ নেই। ট্রাম্প প্রকাশ্যে তার গোয়েন্দা প্রধান টুলসি গ্যাবার্ডের বক্তব্যকে ‘ভুল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
গত শুক্রবার (২০ জুন) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল বলছে। কে এমন বলেছে?” সাংবাদিক জবাব দেন, “আপনার ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স (ডিএনআই), টুলসি গ্যাবার্ড।”
ট্রাম্প তখন বলেন, “তিনি ভুল বলছেন।”
এর আগে মার্চ মাসে কংগ্রেসে দেওয়া এক প্রতিবেদনে গ্যাবার্ড জানিয়েছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো কার্যক্রমে লিপ্ত নয় এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ি স্থগিতকৃত কর্মসূচি পুনরায় চালু করেননি।
তবে শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্যাবার্ড লেখেন, “আমেরিকার কাছে তথ্য রয়েছে—ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি তা হতে দেবেন না—এ বিষয়ে আমিও একমত।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য যদিও ইরানের বর্তমান কর্মসূচি সম্পর্কে সতর্কতা জানায়, তবে এটি আগের সরকারি গোয়েন্দা মূল্যায়নকে অস্বীকার করে না, যেখানে বলা হয়েছে, ইরান এখনো অস্ত্রায়নের পথে যায়নি।
ইরান-ইসরায়েল চলমান উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো যুদ্ধবিরতির পক্ষে যেতে পারে, তবে “এ মুহূর্তে ইসরায়েল যুদ্ধের দিক থেকে এগিয়ে, আর ইরান পিছিয়ে। কেউ যখন জিতে, তখন যুদ্ধ থামাতে বলা কঠিন।”
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প স্পষ্টতই ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন এবং ইরানে বিমান হামলা কমাতে দেশটির প্রতি এখনই কোনো চাপ প্রয়োগের ইচ্ছা নেই।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানাবেন। এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আমূল বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আল জাজিরার সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, “ট্রাম্প শুধু একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন নয়, পুরো মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায়কে অগ্রাহ্য করছেন। এটা নজিরবিহীন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অবস্থানকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।”
ইরানের ভূগর্ভস্থ ফরদো পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করতে ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক সহায়তা প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের GBU-57 বোমা ও তা বহনের জন্য B-2 বোমারু বিমান—যা শুধুই মার্কিন বাহিনীর কাছে রয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলো এই সংঘাতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করলেও ট্রাম্প তাদের ভূমিকা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “ইউরোপ সাহায্য করতে পারবে না।” এর আগে জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এই অবস্থান মার্কিন গোয়েন্দা ব্যবস্থার সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মধ্যে এটি নতুন করে রাজনৈতিক সমীকরণকে নাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে ঘিরে।
শিহাব