
ছবি: প্রতীকী
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে আমাদের দৈনন্দিন খরচ। আবার প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থার ফলে চাকরি করেও আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে, চাকরির পাশাপাশি সাইড বিজনেস হতে পারে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্বচ্ছলতার একটি কার্যকর সমাধান। চাকরিজীবীদের জন্য উপযোগী এবং সম্ভাবনাময় এমন ৫টি সেরা সাইড বিজনেসের আইডিয়া তুলে ধরা হলো:
১️। ফ্রিল্যান্সিং
চাকরির পাশাপাশি কী ব্যবসা করা যায়, এমন প্রশ্ন হরহামেশাই চাকরিজীবীদের মাথায় ঘুরপাকা খায়। এমন প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো ফ্রিল্যান্সিং। আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে এখন কাজ করা সম্ভব। কাজের ক্ষেত্রে নিজের স্বাধীনতা থাকায় এটি খুবই জনপ্রিয়। আবার এতে কোনো ধরনের আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না, শুধু একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগই যথেষ্ট।
অফিসের কাজ শেষে বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সময়কে কাজে লাগিয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন স্কিল যেমন গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস Fiverr, Upwork ব্যবহার করে সবাইকে আপনার দেওয়া সার্ভিস সম্পর্কে জানান। প্রথমে ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করে নিজের অভিজ্ঞতা ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করুন, যা আপনাকে পরবর্তী কাজ পেতে সাহায্য করবে।
২️। হোমমেড ফুড বিজনেস
বর্তমানে অনেকেই কাজের চাপে রান্নাবান্না করার সুযোগ পান না, আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনেকেই হোমমেড ফুডের অর্ডার দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে আপনি ভালো রান্না করতে পারেন। পরিবারের সবাই আপনার হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাহলে আপনি সহজে শুরু করতে পারেন হোমমেড ফুড বিজনেস। এতে তেমন টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয় না এবং রান্না করা খাবার আপনি ঘরে বসেই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সহজে বিক্রি করতে পারবেন। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম পেজে খাবারের ছবি, ভিডিও পোস্ট করে প্রচারণা চালান। এতে তারা প্রতিনিয়ত খাবারের অর্ডার পেয়ে থাকেন। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী খাবার সাপ্লাই দিতে পারলে এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি লাভজনক সাইড বিজনেস।
৩️। কনটেন্ট ক্রিয়েশন
আপনার কোনো সৃজনশীল দক্ষতা আছে যেমন: লেখালেখি করা, ভিডিও তৈরি করা। এসব দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করে অনলাইন থেকে আয় করতে পারেন। লেখালেখি করতে চাইলে আপনি অনলাইনে ব্লগ লিখতে পারেন। নিজের লেখাগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। একসময় আপনার ব্লগের পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, এতে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স থেকে বাড়তি আয় করতে পারবেন। এছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবহার করেও আপনি আয় করতে পারেন। বর্তমানে ইউটিউবিং সাইড বিজনেস হিসেবে খুবই জনপ্রিয় কারণ এতে সহজে বাড়তি আয় করা যায়। আপনার যেকোনো সৃজনশীল দক্ষতার ভিডিও যেমন: ভালো রান্না, চিত্রাঙ্কন, হস্তশিল্প, মেকআপ, ঘর সাজানো ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরি করে আপনি সহজে ইউটিউব থেকে বাড়তি আয় করতে পারেন।
৪️। অনলাইন টিউটরিং বা কোর্স তৈরি
আপনি কোনো বিষয়ে গভীর জ্ঞানসম্পন্ন বা মানুষকে শেখানোর ক্ষেত্রে পারদর্শী। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ, যেমন এটি হতে পারে ইংরেজি বা অন্যকোনো ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান ইত্যাদি। আপনি অফিস টাইম শেষে নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে পড়াতে পারেন। আবার আপনি যদি কম্পিউটারের বিভিন্ন সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট তৈরি, নাচ, গান, ব্যায়াম ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে এসব বিষয়ের উপর অনলাইন কোর্স তৈরি করে তা বিক্রি করতে পারেন। চাইলে সরাসরি শেখাতেও পারেন, যা চাকরির পাশাপাশি সাইড বিজনেস শুরু করার দারুণ আইডিয়া।
৫️। ছাদ বাগান
আপনার বাসার ছাদ হতে পারে আপনার জন্য সেরা একটি বিজনেস আইডিয়া, কারণ আজকাল সবাই অর্গানিক ফুডের দিকে ঝুঁকছে। সবাই এখন ফরমালিন ও কেমিকেলমুক্ত খাবার খেতে চায়, তাই বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনি চাইলে বাসার ছাদে নানা ধরনের শাকসবজি ও ফলমূলের গাছ লাগাতে পারেন। আপনার ছাদ বাগানের পণ্য নিয়ে অনলাইনে কেমিকেল ফ্রি পণ্যের প্রচারণা চালাতে পারেন। এতে আপনার ক্রেতা বৃদ্ধি পাবে এবং সহজে ও ভালো মূল্যে আপনার পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারবেন। ছাদ বাগানের জন্য বড় ধরনের পুঁজির প্রয়োজন হয় না। স্বল্প পুঁজি দিয়ে আপনি এই বিজনেসটি শুরু করতে পারেন। এতে সময়ও কম প্রয়োজন হয়। অফিসের কাজ শেষে ও সাপ্তাহিক ছুটির সময়কে কাজে লাগানোর জন্য এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি কার্যকর সাইড বিজনেস আইডিয়া।
যেকোনো সাইড বিজনেস শুরু করার আগে নিজের আগ্রহ, দক্ষতা ও সময়কে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করুন। ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে শুরু করুন, কারণ শুরু করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য আর পরিশ্রমের সাথে লেগে থাকলে সাফল্য আসবে।
শহীদ