
আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালিকা টুলসি গ্যাবার্ডের ক্ষমতা ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুইবার প্রকাশ্যে গ্যাবার্ডের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন, যেখানে তিনি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না বলেছিলেন, এবং এ নিয়ে চলছে গুঞ্জন যে ট্রাম্প ও গ্যাবার্ডের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।
ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে তার পাশে থাকা এবং ‘যুদ্ধবিরোধী’ অবস্থানের কারণে গ্যাবার্ডকে গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। তবে দু’জনের মধ্যে সাক্ষাৎ বা অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটের সময় ট্রাম্প যখন ইরানের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখন গ্যাবার্ড যেন বাইরে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
ট্রাম্পের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেন, গ্যাবার্ডকে সেই পদে আনা হয়েছিল নির্বাচনে ট্রাম্পকে রক্ষা করার এবং যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য সংঘর্ষে না আটকে রাখার লক্ষ্যে। কিন্তু গত সপ্তাহে হিরোশিমায় যে ভিডিও ক্লিপটি গ্যাবার্ড প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি পারমাণবিক তস্করের ভয়াবহতা এবং কিছু নেতা ও যুদ্ধ প্রবণদের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প মহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখা হয়নি। কিছু সংবাদমাধ্যম বলছে, এ ভিডিওতে বার্তা দেয়ার সময় তিনি এক ধরনের ‘রাজনৈতিক অগ্রসরতা’ নিয়েছেন।
একই ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ আরও বলেন, “রাজনীতি নয়, বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন এখন”। কারণ ইরানের ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই সব গুঞ্জনের পরে গ্যাবার্ডের অফিসে দ্রুত প্রতিক্রিয়া আসে। প্রেস সচিব অলিভিয়া কোলম্যান সংবাদে প্রকাশিত সবকে অস্বীকার করে বলেছেন, “এগুলো কেবল অলস, ভিত্তিহীন বিষ” এবং তিনি প্রতিদিন ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় নিরাপত্তা কেবিনেটকে নিয়মিত বেইফিকাপিত গোয়েন্দা তথ্য উপস্থাপন করছেন।
এদিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স গ্যাবার্ডকে “বীরধর্ষ, দেশপ্রেমিক ও ২০২৪ সালের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী” হিসেবে সমর্থন জানিয়েছেন।
তবে কংগ্রেসের কিছু সদস্য গ্যাবার্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই সপ্তাহে তিনি সিনেটের বুদ্ধিবৃত্তিক কমিটির সামনে হাজির হবেন বলে কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়। টেক্সাসের সিনেটর কর্নিন বলেন, “সফটওয়ার সমন্বয়ে তাকে ডাকা হয়েছিল হোয়াইট হাউজে, তাই সিনেট কমিটিতে উপস্থিত ছিলেন না।” ভ্যা জর্জিয়ার সিনেটর ওয়ার্নার বলেন, “আমার তো কোন ধারণাই নেই যে যেহেতু ইরানে আমাদের নীতি কি।”
গ্যাবার্ডের উপস্থিতি যথাযথ কি না, তা নিয়ে ট্রাম্পের নীতিনীতি বোঝা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
তবে সিনেটর মার্ক কেল্লি মন্তব্য করেন, গ্যাবার্ড তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোয়েন্দা তথ্য তুলে আনেন প্রথমেই সিদ্ধান্ত, পরে তথ্য “যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কখনই সঠিক পদ্ধতি নয়।”
সুতরাং যতই ট্রাম্প প্রশাসন বলুক, গ্যাবার্ডের প্রতি তাদের বিশ্বাস অটুট, বাস্তবে এখন ‘বিশ্বাসের খামচ’ তৈরি হচ্ছে। ট্রাম্প যদি প্রমাণিত গোয়েন্দা তথ্য উপেক্ষা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তায় ভবিষ্যতে তা ‘আইরাক যুদ্ধের মতো’ বিপদ ডেকে আনতে পারে জানিয়ে দিয়েছেন সিনেটও।
পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, দু’সপ্তাহ সময় দিচ্ছেন কূটনৈতিক দ্বার এখনও খোলা রাখা যায় কিনা। কিন্তু গ্যাবার্ডের আশেপাশে এখন গোয়েন্দা কর্মী থেকে কংগ্রেস বনাম হোয়াইট হাউজ অস্পষ্টতার মধ্য দিয়ে দিশানির্ধারণ চলছে। শেষ পর্যন্ত তিনি ট্রাম্পের কৌশল বদলে দিতে পারবেন কি এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সূত্র:https://tinyurl.com/2trfctf5
আফরোজা