
ছবি: সংগৃহীত
ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন হামলা আবারও জোরদার হচ্ছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এবার কৌশলগতভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সেনা পুনর্বিন্যাস করছে ওয়াশিংটন। এরই অংশ হিসেবে ভারত মহাসাগরের ডিয়াগো গার্সিয়া দ্বীপে মোতায়েন করা হয়েছে বিখ্যাত বিফ-৫২ বোমারু বিমান।
এর আগে এই ঘাঁটিতে মোতায়েন ছিল অত্যাধুনিক ও স্টিলথ প্রযুক্তি-সম্পন্ন বিটু বোমারু বিমান। তবে সাম্প্রতিক পরিবর্তনে বিফ-৫২ বিমানের উপস্থিতি সামরিক বিশ্লেষকদের কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি, বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক বার্তা এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রস্তুতি।
পুরনো প্রযুক্তি, কিন্তু শক্তিশালী বার্তা
বি-৫২ বোমারু বিমান প্রথম তৈরি হয় ১৯৫০-এর দশকে। এটি প্রায় ৭০ বছর ধরে মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি ঘণ্টায় ৮৫০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন এই বিমান প্রায় ১৪,০০০ কিলোমিটার পথ একটানা উড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে আঘাত হানার সক্ষমতা রাখে এই বিমান। একেকটি বিফ-৫২ বিমানে ৩২,০০০ কেজিরও বেশি অস্ত্র বহনের সক্ষমতা রয়েছে।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো থেকেই স্পষ্ট, বিফ-৫২ যতই পুরনো হোক না কেন, এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের অন্যতম নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন করে ডিয়াগো গার্সিয়ায় এই বিমানের মোতায়েন মূলত একটি "স্ট্র্যাটেজিক সিগনাল" – যা ইরানসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা।
ইয়েমেন অভিযান ও হুথিদের অবস্থান
ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি আবারও হামলা চালিয়েছে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছিলেন, হুথিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে, তবুও সামরিক প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত ৬ মে ইয়েমেনে বিটু বিমানের অংশগ্রহণে একটি অভিযান শেষ হয়। হুথিদের বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতির পর যুক্তরাষ্ট্র আপাতত বোমাবর্ষণ বন্ধ রেখেছে।
তবে পরিস্থিতি যে এখনও অস্থির, তা বোঝা যায় বিফ-৫২ ইউনিট মোতায়েনের মধ্য দিয়ে। এমন ইউনিট শুধু সরাসরি হামলার জন্য নয়, বরং অনুশীলন, যৌথ প্রশিক্ষণ এবং সামরিক শক্তির প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে তার সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে চায় – যেন প্রয়োজনে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।
পারমাণবিক আলোচনার ব্যর্থতা ও ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব
সম্প্রতি ওমানে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে সেই আলোচনা থেকে আশাব্যঞ্জক কিছু আসেনি। বরং বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আবারও “সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতিতে” ফিরে যাচ্ছে, যার অর্থ ইরানকে চাপে রাখতে সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সব কৌশলই ব্যবহৃত হতে পারে।
ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুঁটি সাজানো
এছাড়াও, সম্প্রতি জাপানের মিসাউয়া এয়ারবেজে যুক্তরাষ্ট্র একটি বি-ওয়ান বোমারু ইউনিট মোতায়েন করে, যা স্পষ্ট করে যে মার্কিন বাহিনী এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও তাদের প্রস্তুতি জোরদার করছে।
এমন অবস্থায়, বিফ-৫২ মোতায়েন শুধুমাত্র সামরিক প্রস্তুতির অংশ নয়; এটি একটি কৌশলগত বার্তা। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইরান এবং তার মিত্রদের জানিয়ে দিতে যে তারা যেকোনো মুহূর্তে আঘাত হানতে প্রস্তুত।
ফরিদ