ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খুন ও ধর্ষণের দায়ে দণ্ডিত: ছদ্মবেশে সাবেক পুলিশ প্রধানের নাটকীয় পলায়ন!

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৯ মে ২০২৫; আপডেট: ০৪:২০, ২৯ মে ২০২৫

খুন ও ধর্ষণের দায়ে দণ্ডিত: ছদ্মবেশে সাবেক পুলিশ প্রধানের নাটকীয় পলায়ন!

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যম নিরাপত্তার একটি কারাগার থেকে পালিয়েছেন এক সাবেক পুলিশ প্রধান, যিনি হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের দায়ে দীর্ঘমেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। রাজ্যের কারাগার কর্তৃপক্ষ রোববার (২৫ মে) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তর আরকানসাসের দুর্গম ওজার্ক পার্বত্য অঞ্চলে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা গ্রান্ট হার্ডিনের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি ‘ডেভিল ইন দ্য ওজার্কস’ নামেও পরিচিত।

হার্ডিন ২০১৭ সাল থেকে ক্যালিকো রকের নর্থ সেন্ট্রাল ইউনিট নামক একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন। ওই বছর তিনি জেমস অ্যাপলটন নামক এক ব্যক্তিকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেন। পরে তার ডিএনএ পরীক্ষায় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় ১৯৯৭ সালে একজন স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে, যে সময় তিনি ইউরেকা স্প্রিংস শহরের পুলিশ অফিসার ছিলেন। এ অপরাধে আরও ৫০ বছরের কারাদণ্ড হয়।

কিভাবে পালালেন হার্ডিন?

কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, রোববার (২৫ মেদ) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে কারাগারের একজন প্রহরীর ছদ্মবেশ ধারণ করে তিনি গেট দিয়ে বেরিয়ে যান। একজন প্রকৃত কারারক্ষী ভুলবশত গেট খুলে দিলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। কারা ইউনিফর্ম বা প্রহরীর পোশাক কীভাবে তিনি সংগ্রহ বা বানালেন, তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর তার পালানোর বিষয়টি জানানো হয়।

তিনি কেন ছিলেন মধ্যম নিরাপত্তার কারাগারে?

কারা বিভাগের মুখপাত্র জানান, বন্দিদের ঝুঁকি মূল্যায়ন ও বিভিন্ন কারাগারের সক্ষমতা বিবেচনা করেই হার্ডিনকে মধ্য-নিরাপত্তা কারাগারে রাখা হয়েছিল। যদিও তার অপরাধ ছিল গুরুতর, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।

হার্ডিনের পুলিশ প্রধানের পদ ও হত্যাকাণ্ড

হার্ডিন ২০১৬ সালে মাত্র চার মাসের জন্য গেটওয়ে শহরের পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাকে নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, তিনি অহেতুক গাড়ি থামানো, অস্ত্র প্রদর্শনসহ নানা ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন। একপর্যায়ে শহর কাউন্সিল তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে।

এর কয়েক মাস পরই তিনি গুলি করে হত্যা করেন শহরের পানি বিভাগের কর্মী জেমস অ্যাপলটনকে। হত্যাকাণ্ডের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রমাণের ভিত্তিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।

ডকুমেন্টারি ফিল্মে উঠে আসে সবকিছু

২০২৩ সালে প্রকাশিত এইচবিওর ডকুমেন্টারি ‘ডেভিল ইন দ্য ওজার্কস’-এ উঠে আসে হার্ডিনের চারিত্রিক নানা দিক। এতে নিহতের স্বজন, ধর্ষণের ভুক্তভোগী, স্থানীয় মেয়র এবং পুলিশের কর্মকর্তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের পরপরই হার্ডিন পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে অবস্থান করছিলেন।

তল্লাশিতে ব্যবহার হচ্ছে ড্রোন, কুকুর ও হেলিকপ্টার

আরকানসাস কারা বিভাগ জানিয়েছে, হার্ডিনের খোঁজে পুলিশ ড্রোন, প্রশিক্ষিত কুকুর ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে। যদিও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে টানা বৃষ্টির কারণে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।

প্রশাসনের আশঙ্কা, কেউ হয়তো তাকে পালাতে সাহায্য করেছে। স্থানীয়, রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

 

সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP)।

রাকিব

×