
ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার অধিকার বাতিল করেছে, যা প্রশাসনের নীতিমালা মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় এই অভিজাত প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর শাস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
“হার্ভার্ড আর বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না এবং বর্তমানে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যত্র স্থানান্তর হতে হবে, না হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অবস্থান হারাবে,” এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোএম নির্দেশ দেন হার্ভার্ডের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVP) সার্টিফিকেশন বাতিল করতে, কারণ হার্ভার্ড গত মাসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আচরণ সংক্রান্ত রেকর্ড হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়।
এই সিদ্ধান্ত হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী-নির্ভর বিশাল জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। হঠাৎ এই ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা চরম উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। শিক্ষকদের আশঙ্কা, বিদেশি শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক সক্ষমতাকে গুরুতরভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, এমনকি প্রতিষ্ঠানটি যখন প্রশাসনের আদর্শগত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়ছে, তখনও।
হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার বলেছে, “বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানো কোনো অধিকার নয়, এটি একটি সুযোগ,” এবং হার্ভার্ড নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করেছে “তাদের এক সময়কার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানকে একটি আমেরিকাবিরোধী, ইহুদিবিদ্বেষী, সন্ত্রাসবাদপন্থী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করার জন্য।”
হোয়াইট হাউস মুখপাত্র অ্যাবিগেল জ্যাকসন সিএনএন-কে বলেন, “তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকান শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলা নানা সমস্যার সমাধান দিতে, এখন তাদের সেই আচরণের ফল ভোগ করতেই হবে।”
হার্ভার্ড ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে সংঘাত চলছে, প্রশাসন চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় তার ক্যাম্পাস প্রোগ্রাম, নীতিমালা, নিয়োগ ও ভর্তি পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনুক, যাতে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের চিহ্নিত করে। প্রশাসন আরও দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ‘বিভিন্নতা, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’র নামে ‘বর্ণবাদী’ প্রক্রিয়া বন্ধ করুক।
তবে হার্ভার্ডের নেতৃত্ব বলছে, শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ‘দৃষ্টিভঙ্গির নিরীক্ষা’ চাওয়া প্রশাসনের এমন দাবিগুলো সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
হার্ভার্ড সেইসব মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম, যারা প্রশাসনের একই ধরনের চাপে রয়েছে, তবে একাডেমিক স্বাধীনতা রক্ষায় সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
SEVP বাতিলের সিদ্ধান্তকে হার্ভার্ড “বেআইনি” বলে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে জানায়, “বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশ থেকে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের স্বাগত জানাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা হার্ভার্ড এবং এই দেশকে অপরিমেয়ভাবে সমৃদ্ধ করে তুলছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় মুখপাত্র জেসন নিউটন বলেন, “আমরা দ্রুত আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের নির্দেশনা ও সহায়তা দেওয়ার জন্য কাজ করছি। এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হার্ভার্ড কমিউনিটি ও আমাদের দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে এবং হার্ভার্ডের একাডেমিক ও গবেষণা মিশনকে দুর্বল করে দিচ্ছে।”
হার্ভার্ড জানিয়েছে, এর আন্তর্জাতিক একাডেমিক জনসংখ্যা প্রায় ৯,৯৭০ জন এবং ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ৬,৭৯৩ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে, যা এর মোট শিক্ষার্থীর ২৭.২ শতাংশ।
সূত্র: সিএনএন
এএইচএ