
ছবি: জনকণ্ঠ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বুক চিরে এক সময় প্রবাহিত হত একটি প্রাকৃতিক প্রাণ, হিসনা নদী। পদ্মার শাখা নদী হিসেবে পরিচিত এই নদী আজ যেন শুধুই স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। অব্যাহত দখল, দূষণ ও পরিকল্পনাহীন ব্যবস্থাপনায় নদীটি আজ চরম অস্তিত্ব সংকটে।
পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে হিসনা নদী দৌলতপুর, ভেড়ামারা, এবং মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। স্থানীয়ভাবে এটি ‘হিসনা-ঝাঞ্চা’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদী এক সময় কৃষি, মৎস্য ও যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রাণশক্তি হারাতে থাকে।
নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, হোটেল-বাসাবাড়ি। এসব স্থাপনা থেকে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। বিশেষ করে আল্লারদর্গা বাজার এলাকায় নদীর বুক জুড়ে এখন পচা সবজি, প্লাস্টিক, চুল ও স্যাঁতসেঁতে আবর্জনার স্তূপ। নদী এখন যেন একটি উন্মুক্ত ডাস্টবিন।
অন্যদিকে, নদীর বিভিন্ন অংশ প্রভাবশালী মহলের দখলে চলে গেছে। বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ শুরু হয়েছে নদীর মাঝেই। ফলে সাধারণ জনগণের প্রবেশ ও ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে।
২০২২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার খননকাজ সম্পন্ন হয়। লক্ষ্য ছিল নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনা। কিন্তু খননের পরই নদীর দখল আবারও চলে যায় প্রভাবশালীদের হাতে। নদী ব্যবহারের সুফল পাননি সাধারণ মানুষ। খনন কার্যক্রম তাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নদীর পাশে বসবাসরত সাধারণ জনগণ জানান, হিসনা নদী ছিল তাদের জীবিকার অংশ। এখন তা হারাতে বসায় তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণ বন্ধ এবং নদী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
পরিবেশবিদদের মতে, কেবল খনন নয়, প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা, আইনি পদক্ষেপ এবং স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া হিসনা নদীকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
একটি নদী হারিয়ে যাওয়ার অর্থ শুধুমাত্র একটি জলধারার নিঃশেষ নয়, বরং একটি অঞ্চল তার সংস্কৃতি, পরিবেশ ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার একটিকে চিরতরে হারায়। হিসনা নদী যেন সেই নিয়তির পথযাত্রী না হয়—এ জন্য এখনই প্রয়োজন সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ।
সাব্বির