ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এবার সেভেন সিস্টার্স নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করছে ভারত

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ১৮ মে ২০২৫

এবার সেভেন সিস্টার্স নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করছে ভারত

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন আর তেমন উষ্ণ নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মাত্রা বেড়েছে। এই টানাপড়েন শুধু কূটনীতির পরিসরে সীমাবদ্ধ না থেকে সম্প্রসারিত হচ্ছে ভৌগোলিক কৌশল পর্যন্ত। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য—যা ‘সেভেন সিস্টারস’ নামে পরিচিত—সেই অঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের বিকল্প যোগাযোগ গড়ে তোলার নতুন উদ্যোগে নেমেছে নয়াদিল্লি।

গত মার্চে চীন সফরকালে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশই হলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ‘ওসিয়ান গার্ডিয়ান’।”

এই বক্তব্য ভারতের কূটনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভারতের কৌশলবিদরা বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে বলছেন, এটি কার্যত নয়াদিল্লিকে ‘জলপথে জিম্মি’ করে রাখার ইঙ্গিত।

বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টারস অঞ্চল সংযুক্ত আছে একটি মাত্র করিডরের মাধ্যমে—শিলিগুড়ি করিডর, যা ভূগোলবিদদের ভাষায় ‘চিকেনস নেক’। এই সংকীর্ণ পথেই সব অর্থনৈতিক ও সামরিক লজিস্টিক নির্ভর করে আছে। অন্য দুটি বিকল্প প্রবেশপথ ছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে, কিন্তু রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক কারণে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে ভারত সরকার একাধিক বিকল্প যোগাযোগ পথ গঠনের পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:

মেঘালয় থেকে আসাম পর্যন্ত চার লেনের হাইওয়ে
শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত ১৬৬.৮ কিমি দীর্ঘ এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ₹২২,৮৬৪ কোটি। এটি চালু হলে এই রুটে ভ্রমণের সময় সাড়ে আট ঘণ্টা থেকে কমে পাঁচ ঘণ্টা হবে। প্রকল্পটি ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কালাদান মাল্টিমডাল ট্রানজিট প্রজেক্ট
কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিত্তে বন্দর পর্যন্ত সমুদ্রপথ, সেখান থেকে নদীপথে পালেতোয়া এবং এরপর সড়ক পথে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত একটি সংযুক্ত ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগে আর বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা দীর্ঘদিন ধরে একটি কূটনৈতিক সুবিধা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু এই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত বঙ্গোপসাগরের উপর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা ভারতকে আরও বিকল্প পথ অনুসন্ধানে বাধ্য করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উন্নয়নগুলো শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি এবং চীনকেও এই অঞ্চলে সক্রিয়ভাবে জড়ানো—সব মিলিয়ে ভারত এখন স্পষ্টভাবে একাধিক ফ্রন্টে নিজের কৌশলগত অবস্থান দৃঢ় করছে।

নুসরাত

×