
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকাজুড়ে অন্তত ৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন, জানিয়েছে গাজা ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরে বিমান হামলায় ৫৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে।
গাজা ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজার ইউরোপিয়ান হাসপাতাল—যেটি গাজায় ক্যানসার রোগীদের জন্য একমাত্র ফলোআপ চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান—সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার কারণে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে বলে সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, “ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতালের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভাগ ও হাসপাতালে যাওয়ার সড়কগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
এদিকে, সিনহুয়াকে দেওয়া তথ্যে চিকিৎসা সূত্র জানায়, গাজা সিটি এবং উত্তর গাজার অন্যান্য অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৬ জন নিহত হয়েছেন।
এই বিমান হামলাগুলো এমন এক সময়ে চালানো হলো যখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দেন যে, “হামাসকে পরাজিত করতে” ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে” গাজায় প্রবেশ করবে।
ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ গাজায় পূর্ণ মাত্রায় সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে, যা দুই মাসের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটায়।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়েছে, সেই থেকে এখন পর্যন্ত ২,৮৭৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৭,৮০০ জনের বেশি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মোট নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩,০১০ জন, যা বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে “জনবহুল এলাকা খালি করার এবং জায়গা সংকোচনের” নীতি গ্রহণ করেছে ইসরায়েল—এমন মন্তব্য করেছেন গাজায় সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল, যিনি বৃহস্পতিবার সিনহুয়াকে বলেন।
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন স্কুল ও শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে হামলার হুমকির মুখে হাজার হাজার মানুষ রাতে রাস্তায় কাটাতে বাধ্য হয়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী উদ্ধারকারীদের কাজে বাধা দিচ্ছে এবং পরিকল্পিতভাবে সিভিল ডিফেন্স অবকাঠামো ধ্বংস করছে।”
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির বেশিরভাগই নারী ও শিশু বলে জানা গেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি মানবিক সহায়তা সংস্থা মে মাসের শেষ নাগাদ গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। তবে তারা ইসরায়েলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে যাতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো এখনই ত্রাণ সরবরাহ চালু করতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চের পর থেকে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি। একটি আন্তর্জাতিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এখন চরম দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে।
মুমু