
কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলায় জড়িত পাঁচ সন্ত্রাসীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। এদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি এবং দুইজন জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা। এই সন্ত্রাসীদের ধরতে জোরদার অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী, কারণ এটি ছিল গত দুই দশকে কাশ্মীর অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি।
সূত্র জানায়, তিন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী হলো আসিফ ফৌজি (ছদ্মনাম মূসা), সুলেমান শাহ (ছদ্মনাম ইউনুস) এবং আবু তালহা (ছদ্মনাম আসিফ)। বাকি দুইজন হলো কাশ্মীর উপত্যকার বাসিন্দা আদিল গুরি (আনন্তনাগের বিজবেহারা থেকে, যিনি ২০১৮ সালে পাকিস্তান গিয়েছিলেন) এবং আহসান (পুলওয়ামার বাসিন্দা, যিনি একই বছর পাকিস্তানে যান)।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই দুই কাশ্মীরি কয়েক বছরের পাকিস্তানি প্রশিক্ষণ শেষে সম্প্রতি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। অন্যদিকে, আসিফ ফৌজি ও সুলেমান শাহ ইতিপূর্বে জম্মু ও কাশ্মীরে সক্রিয় ছিল এবং পুনছ হামলাসহ একাধিক হামলায় জড়িত ছিল।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) পেহেলগামের বাইসারান এলাকায় হামলার সময় সন্ত্রাসীরা পুরুষ বেসামরিক নাগরিকদের ধর্ম প্রমাণ করতে বাধ্য করে— ইসলামিক প্রার্থনা পাঠ করা বা শরীরের নির্দিষ্ট ধর্মীয় চিহ্ন দেখাতে বলে। যারা তা করতে ব্যর্থ হন, তাদের কাছ থেকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়, বলে জানায় প্রাথমিক তদন্ত।
কর্মকর্তারা জানান, হামলাকারীরা উর্দু ভাষায় কথা বলছিল এবং পর্যটকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলার পরই গুলি চালায়।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “যেসব পর্যটক তাদের নির্দেশ না মানার চেষ্টা করেছে, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয়।”
আরেক কর্মকর্তা বলেন, “এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা এবং কাশ্মীরের পর্যটন খাতে অস্থিরতা তৈরি করা।”
জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন ইতোমধ্যে তিন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করেছে এবং প্রত্যেকের সন্ধানদাতার জন্য ২০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, এই হামলায় জড়িতদের মধ্যে মূসা নামের একজন ছিল, যিনি ২০২৪ সালের মে মাসে পুনছ এলাকায় বিমানবাহিনীর কনভয়ে হামলার সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারেন।
বাইসারান এলাকার আশেপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তকারীরা প্রধানত বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করছেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, হামলার পর সন্ত্রাসীরা পীর পাঞ্জালের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় পালিয়ে গেছে।
এদিকে, জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-এর একটি দল, ইন্সপেক্টর জেনারেল বিজয় সাখারে’র নেতৃত্বে, বর্তমানে শ্রীনগরে অবস্থান করছে এবং ইতিমধ্যেই তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশও তাদের সহযোগিতা করছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই হামলার পেছনে লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সাঈদের এক ডেপুটি সাইফুল্লাহ কাসুরির সম্ভাব্য ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে কাসুরি ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বলেন, “২০২৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাশ্মীর ‘পবিত্র ভূমি’তে পরিণত হবে” এবং “আসন্ন সময়ে মুজাহিদিনদের আক্রমণ আরও জোরালো হবে ও কাশ্মীর মুক্ত হবে”।
তৃতীয় এক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়নে দেখা গেছে, এই ধরণের জটিল ও সমন্বিত হামলা লস্কর-ই-তইবার সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে হামলার সূত্র পাকিস্তানের দিকে নির্দেশ করে এমন প্রযুক্তিগত প্রমাণ পেয়েছি।”
তিনি যোগ করেন, “এই হামলায় ভারতীয় বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে বাস্তব সময়ের গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে পূর্ব প্রস্তুতি ও রিকনেসান্সও ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত।”
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
মুমু