ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্পকে টোপ দিলেন জেলেনস্কি

অস্ত্রের বদলে বিরল খনিজ দেবে ইউক্রেন

প্রকাশিত: ২১:১৫, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অস্ত্রের বদলে বিরল খনিজ দেবে ইউক্রেন

অস্ত্রের বদলে বিরল খনিজ! যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে এমনই এক বিনিময় প্রত্যক্ষ করতে পারে আধুনিক পৃথিবী। এ বিষয়ে এক সুরে কথা বলতে শোনা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অব্যাহত সমর্থনের বিনিময়ে ইউক্রেনের একাধিক বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তবে শেষ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি হলে পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। খবর আরটির।
গত প্রায় তিন বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। লড়াইয়ে কিয়েভের বড় ভরসা মার্কিন সামরিক সহায়তা। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেই সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা কমেছে। এই পরিস্থিতিতে অস্ত্র ও গোলা-বারুদের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ওয়াশিংটনকে বিরল খনিজের টোপ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইউরোপের রুটির ঝুড়ি খ্যাত ইউক্রেনের মাটির গভীরে লুকিয়ে আছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বিরল সব খনিজ। এর মধ্যে লিথিয়াম ও টাইটানিয়াম উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দেশটির যে এলাকায় এই খনিজগুলো পাওয়া যায়, বর্তমানে তার সিংহভাগই রয়েছে রাশিয়ার দখলে। বাকি খনিগুলোর অবস্থান রণক্ষেত্র সংলগ্ন এলাকায় হওয়ায় সেখান থেকে খনিজ উত্তোলন বেশ কঠিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। রাজধানী ওয়াশিংটনের ওভাল কার্যালয়ে বসে তিনি বলেছেন, বিরল খনিজের নিরাপত্তা দিতে হবে। এর জন্য আমরা কোটি কোটি ডলার খরচ করছি। ইউক্রেনের কাছে প্রচুর পরিমাণে বিরল খনিজ রয়েছে। আমাদের পদক্ষেপ মেনে নিতে তারা ইচ্ছুক। ইউক্রেনের লিথিয়াম ও টাইটানিয়ামের খনিতে ট্রাম্পের নজর পড়ার মূল কারণ হিসেবে চীনের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন বিরল খনিজের কারণেই অভাবনীয় উন্নতি করেছে বেজিং। দেশটিতে এই ধরনের খনিজের বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। রবিবার নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, পুতিন চান মানুষ মারা যাওয়া বন্ধ হোক। ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি সবসময় পুতিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছেন এবং তার কাছে যুদ্ধ বন্ধের একটি কংক্রিট পরিকল্পনা আছে। তবে তিনি বিস্তারিত আর কিছু জানাননি। তিনি আরও বলেন, আমি চাই এটি দ্রুত শেষ হোক। প্রতিদিন মানুষ মরছে। ইউক্রেনের এই যুদ্ধ ভয়াবহ। আমি এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে চাই। ইউক্রেনীয় সংবাদ সংস্থা কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে রয়েছে বিশ্বের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ জটিল খনিজ ও ধাতু। বিরল খনিজ বলতে ট্রাম্প এর মধ্যে কোনগুলোকে বুঝিয়েছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে ওভাল অফিসে বসে করা মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই মন্তব্যের পর মূলত দুটি খনিজ নিয়ে সর্বাধিক আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি টাইটানিয়াম। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও মহাকাশ গবেষণায় এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। দ্বিতীয় খনিজটির নাম লিথিয়াম। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি থেকে শুরু করে মাইক্রো চিপ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের মেরুদণ্ড হলো এই খনিজ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে এগিয়ে রয়েছে চীন। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রে লিথিয়ামের মজুত বাড়াতে চাইছেন ট্রাম্প। কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই দুই খনিজ ছাড়াও ইউক্রেনের মাটির গভীরে রয়েছে সেরিয়াম, ইট্রিয়াম, ল্যান্থানাম ও নিওডিয়ামিয়াম। সাম্প্রতিক সময়ে নবায়নযোগ্য শক্তি বা জ্বালানির দিকে নজর দিয়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। আর তাই এই খনিজগুলোর চাহিদা বিশ্বজুড়ে হু হু করে বাড়ছে।

×