ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

এনামুল হক

ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পশ্চিম এশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৭ জুন ২০১৮

ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পশ্চিম এশিয়া

গোলান মালভূমিতে ইরানের কথিত রকেট হামলার জবাবে সম্প্রতি ইসরাইল সিরিয়ায় ইরানের ৫০টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। মজার কথা হচ্ছে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরে আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণার দুই দিন যেতে না যেতেই ইসরাইলী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সুতরাং এই দুইয়ের মধ্যে যে একটা পরিষ্কার যোগসূত্র আছে তা কাউকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না এবং এ থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে এই অঞ্চল আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠতে যাচ্ছে। ইয়ান চুক্তি থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার আগেই অবশ্য ইসরাইল সিরিয়ায় ইরানের অন্যান্য টার্গেটে হামলা চালিয়েছে। তবে চুক্তি থেকে আমেরিকার সরে যাওয়ার ফলে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বড় ধরনের আঞ্চলিক যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনাময় পথ তৈরি হয়েছে। অবশ্য সামনের দিনগুলোতে যে দৃশ্যপট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা অতি প্রকট তা হলো এমন এক বহুমুখী ও বহুপক্ষীয় সংঘাত যা সিরিয়ার বঙ্গমঞ্চেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবং এক পর্যায়ে তা উপচে লেবাননেও গড়াতে পারে। ইরান পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পেছনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ওবামার উদ্দেশ্য ছিল ইরান-মার্কিন সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলা নয় বরং ইরানের পরমাণু অস্ত্র করায়ও করার যে হুমকিটা অতি মারাত্মক রূপ নিয়ে দেখা দিয়েছিল সেটি মোকাবেলা করা। ওই চুক্তির দ্বারা ইরানের পরমাণু ইস্যুটিকে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী এবং লেবাননি মিলিশিয়া হিজবুল্লাহর প্রতি তেহরানের সমর্থনের মতো অপারমানবিক বিরোধ থেকে আলাদা করে ফেলা। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলা, ২০১১ সালে সিরিয়ায় বাশারের শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ এবং ২০১৪ সালে আইসিসের উত্থানের ফলে ইরান এই অঞ্চলে তার পদচিহ্ন বহুলাংশে সম্প্রসারিত করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায়। ইরান শিয়া মিলিশিয়াদের অস্ত্র সজ্জিত করে এবং নিজস্ব সামরিক ইউনিট নিয়োগ করে এসব সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে বসে। রাশিয়ার বিমান শক্তির গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন পেযে মস্কো-তেহবান ভি ফ্যাক্টো জোট আইসিসের পরাজয় ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং বাশারকে গৃহযুদ্ধে কার্যকরভাবে জয়ী হতে সাহায্য করে। বৃহত্তর অঞ্চলজুড়ে ইরানের সংশ্লিষ্টতা ও প্রভাব বিস্তার লাভ করায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরাইল এবং সৌদি আরবের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো। ইরানকে তার মার্জিত সুফল থেকে বঞ্চিত করে পরিস্থিতিটা পাল্টে দেয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নতুবা করে কোমর বেঁধে নেমে পড়ার ক্ষেত্রে প্রস্তুত করেছে। কিন্তু সে কাজটা ইউরোপীয় মিত্রদের সহায়তায় ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে তোলার পরিবর্তে ট্রাম্প ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এতে করে তিনি ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচী নতুন করে শুরু করার সব রকম যৌক্তিকতা তুলে দিয়েছেন। যদি ধরেও নেয়া যায় ইরান ওই চুক্তির চৌহদ্দীর মধ্যেই থাকবেÑ তার বাইরে যাবে না, তার পরেও ইরানের প্রভাব খর্ব করতে এখন ওয়াশিংটনের সামনে মাত্র দুটি পথ খোলা থাকবে। তা হলো হয় সামরিক দিক দিয়ে ইরানকে ঠেকানোর চেষ্টা করা, নয়ত সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া। সাময়িক দিক দিয়ে ঠেকানোর কৌশল শেয়া হলে সিরিয়ায় ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত মাঝে মধ্যেই বৃদ্ধি পেতে দেখা যাবে। এই কৌশলের চরম সংস্করণ হিসেবে ইরানের মূল ভূখ-ের পরমাণু ও সামরিক টার্গেটগুলোর ওপর মার্কিন ও ইসরাইলী বিমান হামলা হতে পারে। হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের টার্গেট হওয়ায় এই সংঘাত লেবাননেও ছড়িয়ে পড়ার অধিকতর আশঙ্কা আছে। তবে তেহরানে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে পুরোদস্তুর আঞ্চলিক যুদ্ধ বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। কারণ এমন যুদ্ধের জন্য যে বিশাল স্থল অভিযান পরিচালনা দরকার সে ব্যাপারে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ জনমতের সমর্থনের অভাব আছে এবং অন্যদিকে ইসরাইল ও সৌদি আরবের সেই ক্ষমতা বা সামর্থ্য নেই। আরেক শক্তিশালী বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া। এ অঞ্চলে রাশিয়ার ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি ইরান ও সিরিয়ায় নেতৃত্বকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করবে। সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×