ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাশিয়ার সাময়িক অস্ত্রবিরতি

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাশিয়ার সাময়িক অস্ত্রবিরতি

সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব গৌতায় মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা মানবিক কারণে অস্ত্রবিরতি কার্যকর ছিল। রুশ বাহিনী সোমবার এ ঘোষণা দিয়েছিল। অবরুদ্ধ এলাকাটিকে প্রায় ৪ লাখ লোক বাস করে। তাদের নিরাপদে ওই স্থান ত্যাগ করতে দেয়ার সুবিধার্থে অস্ত্রবিরতি দেয়া হয়। এএফপি। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাটিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সিরিয়ার সরকারী ও রুশ বাহিনী বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সেখানে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দেয়া তথ্যমতে মঙ্গলবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা সাড়ে ৫শ’ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে দেড়শ’ই শিশু। এর আগে শনিবার নিরাপত্তা পরিষদ অবরুদ্ধ ও আহত লোকজনের কাছে জরুরী ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ দিতে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস করে। অস্ত্রবিরতি হলেও শাসক বাশার আল আসাদের অনুগত ও রুশ বাহিনী হামলা অব্যাহত রাখে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাশিয়া দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা অস্ত্রবিরতি দিতে বাধ্য হয়েছে। তা সত্ত্বেও রুশ বাহিনী এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে এলাকা বিশেষে কোন কোন গ্রুপ লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত থাকতে পারে। মঙ্গলবার অস্ত্রবিরতি চলাকালে একবার রকেট নিক্ষেপের খবর এলেও বড় কোন সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। সাময়িক অস্ত্রবিরতি হলেও পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। যে ধরনের মানকি বিপর্যয় সেখানে ঘটে গেছে তা বর্ণনাতীত। জেনেভায় জাতিসংঘের কর্মকর্তা জেন্স লের্কে বলেছেন কখন পূর্ব গৌতায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সংস্থার কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান এ্যাফেয়ার্সের দফতরের মুখপাত্র লের্কে বলেন, ‘আমরা কারও মৌখিক প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে সেখানে ত্রাণ বহর পাঠাতে পারি না। সেখানে আসলেই অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে কি না সেটি আমরা দেখতে চাই।’ জাতিসংঘ চেয়েছিল এক মাসের অস্ত্রবিরতি। সে তুলনায় পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি খুবই অল্প সময়। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফাইন দুজারিক বলেছেন, ‘অস্ত্রবিরতি একেবারে না হওয়ার চেয়ে পাঁচ ঘণ্টা হওয়া বরং ভাল। তবে আমরা দেখতে চাই ৩০ দিনের মধ্যে রক্তপাত হয়েছে।’ সরকারী বাহিনীর বিমান হামলা, ব্যারেল বোমা নিক্ষেপ ও ভারি গোলন্দাজ হামলায় পূর্ব গৌতার অনেক এলাকা বিরান হয়ে গেছে। বিদ্রোহীদের ছোড়া রকেট ও শেলের আঘাতে সরকারী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সম্প্রতি প্রায় ২০ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সাময়িক অস্ত্রবিরতি অবরুদ্ধ লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে পূর্ব গৌতার সব বাসিন্দাই নিজ এলাকা ছেড়ে যেতে আগ্রহী নয়। তাদের অনেকে বাসভবনের বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে। কাউকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও খাদ্য সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। সেখানে খাদ্যদ্রব্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। এলাকাটি ২০১৩ সাল থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পূর্ব গৌতার প্রধান শহর দুমার একজন বাসিন্দা বলছিলেন, ‘রাশিয়ার অস্ত্রবিরতি আমাদের জন্য একটি উপহাস। তারা প্রতিদিন আমাদের ওপর বোমা ফেলছে ও মানুষ হত্যা করছে।’ রুশ বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার জন্য দামেস্কের সহযোগিতায় অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার সেন্টার ফর রিকন্সিলিয়েশন অব অপোজিং সাইডসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, বিরতির মধ্যেও সিরিয়ার সরকারী বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। জায়েশ আল ইসলাম ও ফাইলাক আল রহমান নামে বিদ্রোহীদের দুটি গ্রুপ এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করছে। উভয় গ্রুপই ইসলামপন্থী, ২০১৩ সালে গ্রুপ দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গত মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে কাজাখস্তানের রাজধানী অস্তানায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় গ্রুপ দুটি অংশ নিয়েছিল।
×