
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন হঠাৎ করেই এক ‘শান্তির দূত’ রূপে আবির্ভূত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক মহড়ায় চমক, যুদ্ধজাহাজের আনাগোনা, মিসাইল শেলফে টানটান উত্তেজনার পর হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র বলছে— “এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া দরকার।” প্রশ্ন উঠেছে— তবে কি যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবেই আগুনে ঘি ঢেলে নিজের সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এই উত্তেজনায় ইন্ধন জুগিয়েছিল?
আগুন জ্বললো, কিন্তু কার ইশারায়?
গত এক মাসে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে রকেট হামলা, ড্রোন প্রতিহত এবং সীমান্তে গোলাবর্ষণ নতুন মাত্রা পায় যখন ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে তার ষষ্ঠ নৌবহর পাঠায় ভূমধ্যসাগরে। হোয়াইট হাউজ থেকে প্রতিদিন আসতে থাকে ‘অবস্থান বিশ্লেষণ’ ও ‘জরুরি নিরাপত্তা আলোচনার’ বিবৃতি। অনেক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলছেন— যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থামাতে চায়নি, বরং একটি যুদ্ধ-উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি তৈরি করে নিজের সামরিক উপস্থিতি ও আধিপত্য জাহির করেছে।
শান্তি না শো অফ?
ওয়াশিংটনের একাধিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এমনও বলছেন— এই সংঘাতের মাধ্যমে আমেরিকা তাদের অস্ত্র শিল্পের জন্য এক ধরনের ‘বাজার’ তৈরি করতে চায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে অস্ত্র কিনতে উৎসাহিত করা, নিজের মিত্র দেশগুলোর উপর প্রভাব বাড়ানো এবং বিশ্বকে আবারও মনে করিয়ে দেওয়া— “আমরাই সুপার পাওয়ার।”
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সেনেটর র্যান্ড পল বলেছেন, “আমেরিকা যুদ্ধ চায় না, তবে যুদ্ধের উত্তাপকে কাজে লাগিয়ে নিজের দাপট ফলাতে চায়।”
কৌশলগত ‘শান্তি মিশন’?
অবশ্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট একে বলছে “দায়িত্বশীল কৌশলগত হস্তক্ষেপ”। তারা বলছে, যুদ্ধ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্যই তারা মধ্যস্থতা করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র যদি গোপনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালাতো, তবে এই রক্তক্ষয় ঠেকানো যেত।
জনগণের চোখে:
মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষ এবং বিশ্বজুড়ে সাধারণ জনমত অনেকটাই বিভক্ত। একপক্ষ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থামাতে চেষ্টা করছে। আরেক পক্ষ বলছে, “যুদ্ধের নাট্যমঞ্চের পেছনে মূল নাট্যকার যদি কেউ থাকে, সেটা আমেরিকাই।”
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের আবহে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা একদিকে শান্তির দূত, অন্যদিকে নিজস্ব শক্তির প্রদর্শনীর কুশলী। প্রশ্ন উঠছেই— যুদ্ধ কি কেবল শত্রু দমন নয়, কৌশলগত শক্তি দেখানোরও মঞ্চ হয়ে উঠেছে? বিশ্বরাজনীতিতে এই দ্বিচারিতা নীতির শেষ কোথায়?
Mily