
ন্যাটোর চলমান শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ইউক্রেন ইস্যু গুরুত্ব হারাবে না বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব মার্ক রুটে। সোমবার সম্মেলনের আগের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হবে এবং সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাতেও ইউক্রেনকে যুক্ত রাখা হবে।
রুটে বলেন, “আপনারা সম্মেলনের ঘোষণায় ইউক্রেন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেখতে পাবেন। এর মধ্যে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের পরিকল্পনাও থাকবে, যা ইউক্রেনের জন্য অব্যাহত সহায়তার একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি।”
তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট এখনো এই সম্মেলনের নেতাদের জন্য আয়োজিত নৈশভোজে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। এর ফলে ইউক্রেনের অংশগ্রহণ এবারের সম্মেলনে গতবারের তুলনায় স্পষ্টভাবে নিচে নেমে এসেছে। যদিও নেতারা রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন।
গত বছর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ন্যাটোর ঘোষণাপত্রে ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং দেশটির ন্যাটোতে যোগদানের ‘অপরিবর্তনীয় পথ’ সমর্থনের ঘোষণা ছিল। এবার সেই উচ্চমার্গের কূটনৈতিক গুরুত্ব পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির সম্পর্ক এখনও জটিল। চলতি বছর ওভাল অফিসে বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। সেই প্রেক্ষাপটেই এবার জেলেনস্কিকে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠকের মূল টেবিলে বসানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে জেলেনস্কির জন্য সম্মেলনে অন্যান্য কিছু আলাদা বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। তবুও বুধবার নেতাদের মূল কার্যকরী বৈঠকে তার উপস্থিতির দরজা বন্ধই থাকছে। রুটে নিজেও স্বীকার করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ এই সম্মেলনের আলোচনায় বড় প্রভাব ফেলছে।
রুটে বলেন, “এই জোটের জন্য সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রত্যক্ষ হুমকি এখনও রাশিয়ান ফেডারেশন। মস্কো এখনও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে উত্তর কোরিয়া, ইরান, চীন ও বেলারুশ সহায়তা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “জোট ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যয় বহন করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো দিয়ে। ইউরোপীয় মিত্র এবং কানাডা আগামী বছরের জন্য অতিরিক্ত ৩৫ বিলিয়ন ইউরো নিরাপত্তা সহায়তা দেবে ইউক্রেনকে। কিছু মাস আগেও এই পরিমাণ ছিল ২০ বিলিয়ন। এটি নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি।”
এদিকে সোমবার রাতে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, মস্কো ইউক্রেনে ৩৫২টি ড্রোন ও বিভ্রান্তিকর বস্তু, ১১টি ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং ৫টি ক্রুজ মিসাইল ছুড়েছে। এতে অন্তত ১৪ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
জেলেনস্কির অনুপস্থিতি ইউক্রেন ইস্যুর কূটনৈতিক গুরুত্ব কিছুটা কমিয়ে আনলেও ন্যাটো স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, দেশটির পাশে দাঁড়ানো তাদের অগ্রাধিকারেই থাকবে। যুদ্ধের ভয়াবহ বাস্তবতা ও ইউরোপের নিরাপত্তা ইস্যুতে ইউক্রেন এখন আর শুধু একটি দেশ নয়, বরং একটি প্রতিরোধের প্রতীক। আর ন্যাটোর ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণেও এই প্রতিরোধের ভূমিকা কম নয়।
সূত্র:এপি
আফরোজা