
ছবি: সংগৃহীত
ইরানকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন— এই সংঘাত কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটাতে পারে?
গত কয়েক মাস ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, কূটনৈতিক সমাধানই একমাত্র পথ, কিন্তু ইসরায়েল প্রকাশ্যে বলেছে— সামরিক হামলাই ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংসের একমাত্র উপায়। অন্যদিকে, যেকোনো হামলার জবাব দিতে শতভাগ প্রস্তুতির কথা জানিয়ে চমকে দিয়েছে ইরান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে এখন এমন উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে নজিরবিহীন। ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা, তাদের মিত্র প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা এবং পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে তেহরানের অবস্থান পুরো বিশ্বকে উদ্বেগে ফেলেছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। এরই প্রেক্ষিতে পারস্য উপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এটিকে তেহরানের প্রতি একপ্রকার সামরিক হুঁশিয়ারি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের আক্রমণের জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর নির্দেশ পেলেই শুরু হবে পাল্টা হামলা। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সির ২৪ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
ইসরায়েলের যেকোনো সামরিক আগ্রাসনের জবাবে শুধু ইরান নয়, তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরাও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও বসে নেই। ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সামরিক ঘাঁটিতে প্রস্তুতি বাড়িয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটও যুক্ত হতে পারে সংঘাতে। অন্যদিকে, ইরানের সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে চীন ও রাশিয়াও তেহরানের পাশে থাকতে পারে, এমনকি সামরিক সহায়তাও দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে সংঘাতটি শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা বিশ্বে।
বিশ্বব্যাপী এই উত্তেজনার অন্যতম অর্থনৈতিক দিক হচ্ছে হরমুজ প্রণালী। পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের সংযোগস্থল এই প্রণালীর মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়। ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তবে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি এমন হুমকি দিয়েছে আইআরজিসি।
সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা চালালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা হয়তো অবধারিত নয়, তবে এটি একটি বাস্তব ও ভয়াবহ ঝুঁকির সৃষ্টি করবে— যা বিশ্বকে ঠেলে দিতে পারে গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=RBQJ3lT3wpo
মেহেদী