
ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের জেরে দক্ষিণ এশিয়ায় চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের প্রতি শান্তি ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে চীন। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ও পিওকে-তে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামের সামরিক অভিযান চালায়। এই প্রেক্ষিতে বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপকে তারা ‘দুঃখজনক’ বলে মনে করে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “চীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর আজ সকালের সামরিক অভিযানকে দুঃখজনক হিসেবে দেখছে। আমরা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের প্রতিবেশী, আর তারা চীনেরও প্রতিবেশী। চীন সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে। আমরা উভয় পক্ষকে বৃহত্তর শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সংযত থাকতে, শান্ত থাকার আহ্বান জানাই। এমন কোনও পদক্ষেপ যেন না নেওয়া হয় যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।”
চীন বলেছে, পাকিস্তান ও পিওকে-তে ভারত যে সামরিক হামলা চালিয়েছে, তা সরাসরি পাহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে এসেছে। পাহেলগামের ঘটনার পর থেকেই চীন, যাকে পাকিস্তানের ‘আয়রন ব্রাদার’ বলা হয়, একদিকে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানিয়েছে, অন্যদিকে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়েছে এবং একটি নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবি তুলেছে।
গত কয়েক দিনে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগও বেড়ে গেছে। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই-এর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ২৭ এপ্রিল। অন্যদিকে, পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত জিয়াং জাইডং দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ওয়াং ই দারকে বলেন, “চীন ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি যৌথ দায়িত্ব। আমরা চাই পাহেলগাম হামলার একটি নিরপেক্ষ তদন্ত দ্রুত হোক। কারণ এই সংঘাত না ভারত, না পাকিস্তান কারোর প্রকৃত স্বার্থ রক্ষা করে, বরং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করে।”
চীনের শীর্ষ কূটনীতিক আরও বলেন, “একজন ‘আয়রন ব্রাদার’ ও সর্বাবস্থার কৌশলগত সহযোগী হিসেবে চীন পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈধ উদ্বেগকে পুরোপুরি সমর্থন করে এবং তার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় পাশে রয়েছে।”
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার এই ঘনঘটা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। চীনের আহ্বান এখন দুই দেশের কৌশলগত সিদ্ধান্তে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটিই দেখার বিষয়। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি উত্তেজনার আগুন না ছড়িয়ে দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করা, যাতে পুরো অঞ্চল এক অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের মুখে না পড়ে।
সূত্র:https://tinyurl.com/yeykvyee
আফরোজা