ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ক্লিনিক্যালি মায়ের মৃত্যুর পরও যেভাবে জন্ম নিল গর্ভের সন্তান!

প্রকাশিত: ১২:৪০, ১০ জুলাই ২০২৫

ক্লিনিক্যালি মায়ের মৃত্যুর পরও যেভাবে জন্ম নিল গর্ভের সন্তান!

জন্ম নিল গর্ভের সন্তান

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় ঘটনাটি শুরু হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ৩০ বছর বয়সী অ্যাড্রিয়ানা স্মিথ নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ নার্স হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসার পর বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে। পরদিন সকালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ফের হাসপাতালে নেয়া হলে ধরা পড়ে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। দ্রুত অবনতি ঘটে শারীরিক অবস্থার, এবং তাকে ঘোষণা করা হয় ব্রেইন ডেড অর্থাৎ মস্তিষ্কের সব কার্যক্রম চিরতরে বন্ধ।

এক ব্রেইন ডেড নারীর গর্ভে বেড়ে উঠা শিশুর জন্ম হয়েছে। ঐ নারীর মৃত্যুর পরেও তার গর্ভের সন্তান জীবিত ছিল। আর তাই নতুন ছোট্ট প্রাণ বাঁচাতে ভিন্ন পথ বেঁছে নেন চিকিৎসকরা।  দ্য গার্ডিয়ান থেকে জানা যায়, অসুস্থ হলে ঐ নারীর মস্তিষ্কের সব কার্যক্রম বন্ধ হয় যায়। তবে পেটের সন্তান তখন জীবিত থাকায় টানা চার মাস ধরে যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে সচল রাখা হয়েছিল ঐ নারীর হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস। 

ব্রেইন ডেথ মানেই শারীরিকভাবে মৃত্যু। সাধারণত তখন লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। কিন্তু অ্যাড্রিয়ানা ছিলেন আট সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। অ্যাড্রিয়ানা তার দ্বিতীয় সন্তান জন্মের অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু তার আগেই চলে যেত হলো তাকে। অন্যদিকে, জর্জিয়ার আইন অনুযায়ী, গর্ভস্থ ভ্রূণের হৃদস্পন্দন শুরু হয়ে গেলে সেই গর্ভপাত বা মায়ের মৃত্যু হলেও, ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভের প্রাণ থামানো বেআইনি। 

 ফলে অ্যাড্রিয়ানার পরিবার চাইলেও তার লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করতে পারেননি। এমোরি ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবল আইনের নির্দেশ মেনে, মৃত্যুর পরও তার দেহ কৃত্রিমভাবে সচল রাখে। অ্যাড্রিয়ানার মা সংবাদমাধ্যমে বলেন, আমার মেয়ের দেহের ওপর আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। লাইফ সাপোর্টে রাখা অ্যাড্রিয়ানার মৃতদেহে কৃত্রিমভাবে চলেছে শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন ও রক্ত সঞ্চালন। এই প্রক্রিয়ায় তার জরায়ুও সচল রাখা হয়, যাতে গর্ভের সন্তান বৃদ্ধি পেতে পারে।

জুন মাসে, গর্ভাবস্থার মাত্র ২৫ সপ্তাহ পার হওয়ার পর, ডাক্তাররা সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে শিশুটিকে জন্ম দেন। জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল দুই পাউন্ডেরও কম। এখন সে একটি নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা শিশুটির নাম রেখেছে ‘চান্স’ অর্থাৎ “সুযোগ”। তার পৃথিবীতে আসার পথ যতটা ব্যতিক্রমী, ততটাই কঠিন। অন্যদিকে, সন্তান জন্মের দিন পর ৩১ বছর বয়সী অ্যাড্রিয়ানার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়ার পর তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। 

দ্য গার্ডিয়ান

তাসমিম

×