ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

স্ট্রোকের আগাম লক্ষণ: কোন উপসর্গগুলো অবহেলা করবেন না

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১৮ জুন ২০২৫

স্ট্রোকের আগাম লক্ষণ: কোন উপসর্গগুলো অবহেলা করবেন না

স্ট্রোক এমন একটা সমস্যা যা প্রতিক্ষেত্রেই প্রাণসংশয় ডেকে আনে। ব্রেন স্ট্রোকের পর হাতে সময় প্রায় থাকে না। যেটুকু সময় মেলে তার মধ্যেই উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে পরিস্থিতি খুবই জটিল হয়।

মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বা সেরিব্রাল থ্রোম্বোসিস, অনেক সময় হঠাৎ স্ট্রোক ডেকে আনে। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, স্ট্রোকের আগেও শরীর বেশ কিছু স্পষ্ট সংকেত দিয়ে দেয়, যেগুলোর দিকে সময়মতো খেয়াল না দিলে তা হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। ‘হেলথলাইন’-এর তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার এমন ৯টি নিঃশব্দ লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো স্ট্রোকের কয়েক সপ্তাহ আগেই দেখা দিতে পারে।

এই লক্ষণগুলো সহজেই সাধারণ স্বাস্থ্য জটিলতা বলে ভুল হতে পারে। কিন্তু সময়মতো বোঝা গেলে তা একজনের জীবন বাঁচাতে পারে।

হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধলে এটি তীব্র মাথাব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। এমন ব্যথা পূর্বে কোনো সতর্কতা ছাড়াই শুরু হয় এবং কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, এমনকি ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরেও কমে না। এটি সবচেয়ে প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সংকেত।

শরীরের এক পাশে দুর্বলতা বা অবশ ভাব
হাত, পা বা মুখের এক পাশে হঠাৎ দুর্বলতা কিংবা অবশ ভাব অনুভব করা স্ট্রোকের একটি ক্লাসিক লক্ষণ। এটি শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত করে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা সৃষ্টি করে।

কথা বলতে অসুবিধা
হঠাৎ করে কথা জড়িয়ে যাওয়া, শব্দ উচ্চারণে অস্পষ্টতা কিংবা অন্যের কথা বুঝতে না পারা—এই সমস্যাগুলোও মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় মনে হয় আপনি কথা বলতে চাইছেন কিন্তু সঠিকভাবে শব্দ গঠন করতে পারছেন না।

দৃষ্টির সমস্যা
এক বা দুই চোখেই হঠাৎ ঝাপসা দেখা, ডাবল ভিশন বা আংশিক দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া—এগুলোও হতে পারে ব্রেইনে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটার ইঙ্গিত। এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল উপসর্গও যুক্ত হতে পারে।

ভারসাম্য হারানো বা সমন্বয়ের সমস্যা
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট অনেক সময় মাথা ঘোরা, দিকভ্রান্তি বা হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি করে। এতে হঠাৎ পড়ে যাওয়া, ঠিকমতো হাঁটতে না পারা বা চারপাশ ঘুরছে বলে মনে হওয়া—এসব দেখা যায়। এটি গুরুতর একটি সতর্ক সংকেত।

বিভ্রান্তি বা বুঝতে অসুবিধা
কখনও কখনও খুব সাধারণ কথাবার্তাও যেন বোঝা যাচ্ছে না, পরিচিত মানুষকে চিনে ফেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বা সহজ প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না—এ ধরনের আচরণ মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতার ইঙ্গিত দেয়।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
রক্ত জমাট বাঁধা যদি তীব্র হয়ে যায়, তা সরাসরি অজ্ঞান করে দিতে পারে। হঠাৎ করেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলা, যেকোনো প্রকার পূর্বাভাস ছাড়াই এমন ঘটনা ঘটতে পারে এবং এটি চিকিৎসার দৃষ্টিতে জরুরি অবস্থা।

খিঁচুনি
মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধলে অনেক সময় প্রথম লক্ষণ হিসেবে খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে। হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিত অঙ্গচলাচল, সংজ্ঞাহীনতা বা অস্বাভাবিক অনুভূতির মাধ্যমে এটি প্রকাশ পায়।

বমি বা বমি বমি ভাব
কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, যদি সেটির সঙ্গে অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল উপসর্গ থাকে, তবে এটি মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে চাপ বা উত্তেজনার ফল হতে পারে। এটি অবহেলা করা উচিত নয়।

উপরের যেকোনো উপসর্গ যদি একাধিকবার দেখা দেয়, বা একসঙ্গে একাধিকটি লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখা জরুরি, স্ট্রোক যত দ্রুত শনাক্ত হয়, তত দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।

মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা হঠাৎ স্ট্রোক ঘটাতে পারে, তবে স্ট্রোক আসার আগেও শরীর কিছু সতর্কবার্তা দেয়। এসব সংকেত যদি সময়মতো শনাক্ত করা যায়, তবে গুরুতর বিপদ এড়ানো সম্ভব। তাই মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, খিঁচুনি কিংবা দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ ক্ষীণ হয়ে আসার মতো উপসর্গকে কখনই অবহেলা করবেন না। সময়মতো চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হতে পারে এ ধরনের প্রাণঘাতী ঝুঁকি শনাক্তের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

সানজানা

×