থাইরয়েড ক্যানসারের যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো আমরা প্রায়ই উপেক্ষা করি

শরীরের সামান্য এক অংশ, গলার নিচের প্রজাপতি-আকৃতির একটি গ্রন্থি থাইরয়েড। অথচ এর ব্যাঘাত হলে ঘটতে পারে বিপদ। থাইরয়েড ক্যানসার তখনই হয়, যখন এই গ্রন্থির কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে এবং ক্যানসার তৈরি হয়। দ্রুত ধরা পড়লে এই রোগ নিরাময়যোগ্য হলেও, প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে অনেকেই তা সময়মতো বুঝতে পারেন না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইরয়েড ক্যানসার সাধারণত নারীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে। এটি খুব বেশি প্রচলিত না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এ অবস্থায় কিছু প্রাথমিক লক্ষণ আগেভাগে চিনে নিতে পারলে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। নিচে থাকছে থাইরয়েড ক্যানসারের এমনই পাঁচটি উপেক্ষিত লক্ষণ।

১. গলার নিচে হঠাৎ চাকা বা ফোলা
থাইরয়েড ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ হলো গলার সামনের নিচের অংশে ছোট একটি চাকা বা ফোলা অনুভব হওয়া। এটি প্রায়ই ব্যথাহীন হয় এবং ধীরে ধীরে বড় হয়, ফলে দীর্ঘদিন চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। এই চাকা সাধারণত আশপাশের টিস্যুর তুলনায় শক্ত অনুভব হয় এবং সহজে নড়ে না। অনেকেই এটি অগ্রাহ্য করেন, কারণ এতে তেমন কোনো অস্বস্তি হয় না। তবে মনে রাখতে হবে, এটি গয়টার বা সিস্টের মতো অ-ক্যানসারজনিত কারণেও হতে পারে, কিন্তু যেকোনো নতুন বা বেড়ে ওঠা ফোলার ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২. কণ্ঠস্বরে ভাঙন, গলা বসে যাওয়া
আপনার কণ্ঠ হঠাৎ করেই ভারী, ভাঙা বা বসে যাচ্ছে? ঠান্ডা লেগেছে ভেবে উপেক্ষা করছেন? সাবধান। থাইরয়েড ক্যানসারের একটি প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বা গলা বসে যাওয়া, যা কণ্ঠনালির আশপাশের নার্ভে টিউমার চাপ দিলে ঘটে থাকে। সাধারণ ঠান্ডা বা অ্যালার্জির মতো সমস্যায়ও গলা বসে যেতে পারে, তাই অনেকে এটি গুরুত্ব দেন না। কিন্তু যদি এই অবস্থা কয়েক সপ্তাহেও না সারে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা উচিত।

৩. গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
টিউমার বড় হতে থাকলে তা খাদ্যনালী বা শ্বাসনালিতে চাপ দিতে পারে। এর ফলে গিলতে অসুবিধা হতে পারে বা গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হতে পারে। এমনকি হঠাৎ করে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাস নিতে শব্দ হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকে একে গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি বা সাধারণ অ্যালার্জি ভেবে ভুল করেন। কিন্তু যদি এমন লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে তা অবহেলা না করে পরীক্ষা করানো উচিত।

৪. গলার সামনের দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি
কোনো ঠান্ডা না থাকা সত্ত্বেও যদি ঘাড় বা গলার সামনের দিকে নিয়মিত ব্যথা অনুভব করেন, সেটিও থাইরয়েড ক্যানসারের সূচক হতে পারে। মাঝে মাঝে এই ব্যথা কানে ছড়িয়ে পড়তেও দেখা যায়। যেহেতু গলার ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে, তাই অনেকে এটিকে গুরুত্ব দেন না। তবে যদি এটি দীর্ঘদিন থাকে এবং সাধারণ ওষুধে না কমে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৫. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত দুর্বলতা
থাইরয়েড ক্যানসার যখন শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে শুরু করে, তখন ওজন হঠাৎ করে কমে যেতে পারে এবং শরীর চরম দুর্বলতা অনুভব করে। এই লক্ষণগুলো আমরা প্রায়ই স্ট্রেস, ব্যস্ততা বা অন্য কোনো অসুস্থতার ফল ভেবে ভুল করি। কিন্তু যদি কোনও কারণ ছাড়াই আপনি দ্রুত ওজন হারাতে থাকেন বা দীর্ঘদিন ধরে খুব দুর্বল বোধ করেন, তাহলে একে অবহেলা করা যাবে না।

থাইরয়েড ক্যানসার দ্রুত নির্ণয় করা গেলে অপারেশন, রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন থেরাপি এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্টের মতো চিকিৎসা সহজ ও সফল হয়। শরীর যেভাবে নিঃশব্দে সংকেত পাঠাতে শুরু করে, সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনে দ্রুত পরীক্ষা করানোই পারে জীবন বাঁচাতে।

আপনার শরীরের ক্ষীণ বার্তাগুলোর প্রতি মনোযোগী থাকুন। কারণ অনেক সময় বড় অসুস্থতার গল্প শুরু হয় একেবারে ছোট একটি উপেক্ষিত লক্ষণ থেকেই।

সূত্র:https://tinyurl.com/2efy9evh