ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

আপনার প্রতিদিনের তিনটি খাবার নিঃশব্দে নষ্ট করছে লিভার, আপনি জানতেও পারছেন না!

প্রকাশিত: ১২:১৯, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:২০, ১৮ জুন ২০২৫

আপনার প্রতিদিনের তিনটি খাবার নিঃশব্দে নষ্ট করছে লিভার, আপনি জানতেও পারছেন না!

লিভার আমাদের শরীরের একেবারে নির্ভরযোগ্য অঙ্গ। হজম থেকে শুরু করে শরীরকে বিষমুক্ত রাখা, বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখা সবই এই লিভার সামলায় চুপচাপ। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকাতেই এমন কিছু পদ আছে, যেগুলো দিনে দিনে লিভারকে নিঃশব্দে ধ্বংস করে দিচ্ছে? আপনি টেরও পাচ্ছেন না।

এবার সেই খাবারগুলোর তালিকা দিয়েছেন দুবাইভিত্তিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পালক মিধা। তার মতে, সমস্যা শুধু মদ কিংবা ফাস্টফুডে সীমাবদ্ধ নয়। বরং আপনার রোজকার খাদ্যতালিকায় থাকা তিনটি সাধারণ খাবারই হতে পারে লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু।

চলুন জেনে নিই সেই তিনটি খাবারের কথা, যেগুলো হয়তো আপনি এখনও ‘নিরাপদ’ বলে ধরে নিচ্ছেন।

১. অতিরিক্ত মিষ্টি ও ফ্রুক্টোজযুক্ত খাবার লিভারের নিঃশব্দ শত্রু

মিষ্টি পানীয়, সিরিয়াল, ক্যান্ডি বা ফ্লেভার্ড দই এসব আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার মনে করে খেয়ে থাকি। বিশেষ করে সকালে সিরিয়াল খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু এই সিরিয়ালের মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে লিভার ধ্বংসের বীজ।

এইসব খাবারে থাকা হাই-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ (HFCS) সরাসরি লিভারে জমে। অন্যান্য কোষের মতো গ্লুকোজের ব্যবহার না করে, ফ্রুক্টোজ লিভারেই পুরোপুরি প্রক্রিয়াজাত হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এগুলো খেলে ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি লিভারে প্রদাহ, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এসব ক্ষতি ধীরে ধীরে জমতে থাকে এক বছর, দুই বছর, কখনও হয়তো দশ বছর!

আপনার করণীয়: মিষ্টি পানীয়, ক্যান্ডি, প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে আনুন। ফল খান পুরোটা ফাইবারসহ যাতে চিনি ধীরে হজম হয়।

২. রিফাইন্ড তেল যেটাকে আমরা ‘ভালো’ ভেবেই খাচ্ছি

আমরা অনেকেই সয়াবিন, সূর্যমুখী বা কর্ন তেল ব্যবহার করি ‘হার্ট-হেলদি’ বলে। অথচ এগুলোই হতে পারে লিভারের ক্ষতির অন্যতম কারণ। এই তেলগুলোতে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে বেশি, যা শরীরের ওমেগা-৩ ও ৬-এর ভারসাম্য নষ্ট করে এবং শরীরে স্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে।

এরচেয়েও বিপজ্জনক হলো, উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার সময় এসব তেল থেকে তৈরি হয় ‘অ্যালডিহাইড’ নামের এক বিষাক্ত রাসায়নিক, যা সরাসরি লিভারের কোষে আঘাত হানে।

আপনার করণীয়: সয়াবিন, সূর্যমুখী তেল বাদ দিয়ে ঘি, অলিভ অয়েল বা অ্যাভোকাডো অয়েল ব্যবহার করুন। বাইরে খাওয়ার সময় ভাজা বা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৩. ফলের রস:স্বাস্থ্যকর ভাবলেও এটি হতে পারে লিভারের গোপন শত্রু

কমলার রস, আপেলের রস, আঙ্গুরের রস শুধু ‘প্রাকৃতিক’ বলেই তো বিশ্বাস করে খাই আমরা। কিন্তু সত্যি হলো, ফলের রসে কোনো ফাইবার থাকে না। আর সে কারণেই এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক চিনি খুব দ্রুত শরীরে শোষিত হয়, যা লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।

এক গ্লাস কমলার রসে যে পরিমাণ চিনি থাকে, তা অনেক সময় এক গ্লাস কোমল পানীয়র সমান হয়। প্রিডায়াবেটিক বা ওজন বেশি এমন মানুষদের জন্য এটা হতে পারে নীরব বিপদ।

আপনার করণীয়: গোটা ফল খান, রস না। একান্তই রস খেতে হলে পানির সঙ্গে মিশিয়ে薄 করে খান এবং পরিমাণে কম রাখুন।

লিভারের ক্ষতি কি তাহলে অনিবার্য?

না, একদমই না। লিভার হলো এমন একটি অঙ্গ, যা নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে যতদিন না আপনি তাকে আর বাড়তি ক্ষতি করেন। তাই আজই আপনার খাবারের তালিকা একটু দেখে নিন। মিষ্টি কমান, রিফাইন্ড তেল বাদ দিন, গোটা ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।

আপনার লিভার কোনো অভিযোগ করবে না। বরং নিঃশব্দে আপনাকে সুস্থ রাখবে বছরের পর বছর।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/yh56dakk

আফরোজা

×