ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যেগুলো অবহেলায় হতে পারে থাইরয়েড ক্যান্সার

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:২০, ১৮ জুন ২০২৫

৫টি প্রাথমিক লক্ষণ, যেগুলো অবহেলায় হতে পারে থাইরয়েড ক্যান্সার

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে থাইরয়েড ক্যান্সারের হার ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। কিন্তু সমস্যাটা হলো—এই ক্যান্সারের শুরুর লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে অনেকেই সেগুলো অবহেলা করেন কিংবা চিনতেই পারেন না। অথচ সচেতনতা থাকলে আগেভাগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়, জীবন বাঁচানো যায় সহজেই।

গলার নিচে অবস্থিত প্রজাপতির মতো আকারের থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে, যা হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, ওজন ও দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যেই এই ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। যদিও এটি বিরল, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক থাইরয়েড ক্যান্সারের এমন ৫টি প্রাথমিক উপসর্গ, যা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়—

১. গলার নিচে হঠাৎ ফোলাভাব বা গুটি

গলার সামনের অংশে, বিশেষ করে নিচের দিকে যদি কোনো ফোলাভাব বা ছোট গুটি অনুভব করেন, তবে সেটিকে অবহেলা না করাই ভালো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ধরনের গুটিগুলো ব্যথাহীন হয় এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, তাই সহজেই নজরে আসে না। সাধারণত এটি ঘাড়ের অন্য টিস্যুর তুলনায় শক্ত, নড়াচড়াও করে না। অনেকে এটিকে সাধারণ গ্লান্ড বা সিস্ট ভেবে বসে থাকেন, কিন্তু যে কোনো নতুন বা বড় হতে থাকা গুটি নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২. কণ্ঠস্বর হঠাৎ ভেঙে যাওয়া বা স্বর পরিবর্তন (Hoarseness)

কণ্ঠস্বর হঠাৎ ভাঙা বা স্বর পরিবর্তন থাইরয়েড ক্যান্সারের একটি সম্ভাব্য প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় টিউমারটি কণ্ঠনালী সংলগ্ন স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করলে এমনটা হয়। সাধারণ ঠান্ডা লাগা, এলার্জি বা গলার চাপ ভেবে অনেকে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে যদি কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও স্বরের কর্কশ ভাব (Hoarseness) না কমে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৩. গিলতে বা নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া

টিউমার ধীরে ধীরে বড় হলে তা খাদ্যনালী বা শ্বাসনালিতে চাপ দিতে পারে, ফলে খাবার গিলতে কষ্ট বা শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় মনে হয় গলায় কিছু আটকে আছে। আবার শ্বাস নিতে গেলে শব্দ হয় বা ঘনঘন হাঁপ ধরা শুরু হয়। একে অনেকেই অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা সর্দিজনিত সমস্যা বলে ভুল করেন, কিন্তু যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে এটি থাইরয়েড টিউমারের কারণ হতে পারে।

৪. গলা বা ঘাড়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা

গলার সামনের দিকে বা ঘাড়ে অস্বাভাবিক ব্যথা এবং তা যদি কানে ছড়িয়ে পড়ে, সেটিও একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। যদিও এই ব্যথা অনেক সময় গলার ইনফেকশন বা পেশীর টান থেকেও হতে পারে, তবুও কোনো পরিচিত কারণ ছাড়াই যদি ব্যথা থেকে যায়, তাহলে সেটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।

৫. ওজন কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত দুর্বলতা

অসাধারণভাবে ওজন কমে যাওয়া এবং সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করা থাইরয়েড ক্যান্সারের পরবর্তী ধাপের লক্ষণ হতে পারে। শরীরে কোনো ইনফেকশন না থাকা সত্ত্বেও দুর্বলতা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে সেটি শরীরের মেটাবলিজমে কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে পারে। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

বিশেষ পরামর্শ:

এই উপসর্গগুলো উপস্থিত থাকলেও এটি নিশ্চিতভাবে ক্যান্সার নয়। তবে অবহেলা না করে সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে বড় বিপদ এড়ানো যায়। থাইরয়েড ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার, রেডিওআইডিন থেরাপি ও হরমোন রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে চিকিৎসা বেশ কার্যকর হয়।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×