
ছবি: সংগৃহীত
আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি হলো যকৃত বা লিভার। এটি শরীরকে বিষমুক্ত করে, খাবার হজমে সহায়তা করে, এবং প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে। কিন্তু সমস্যা হলো—যকৃত যখন আক্রান্ত হতে শুরু করে, তখন প্রাথমিক উপসর্গগুলো এতটাই নীরব যে আমরা অনেক সময় তা বুঝতে পারি না।
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ যকৃতের নানা সমস্যায় ভোগেন—হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার, সিরোসিস এর মধ্যে অন্যতম। অথচ সময়মতো যদি চিকিৎসা শুরু করা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই রোগ পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তাই নিচের সাতটি লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুব জরুরি।
১. ক্রমাগত দুর্বলতা ও ক্লান্তি
সবসময় ক্লান্ত লাগছে? এমনটা স্বাভাবিক নয়। যকৃত ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে ঘুম বা বিশ্রাম যথেষ্ট হলেও শরীর দুর্বল লাগে। অনেকেই একে মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত কাজ বলে এড়িয়ে যান, কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. পেটের ডান পাশে ব্যথা বা ফুলে যাওয়া
লিভার থাকে পেটের ওপরের ডান পাশে। সেখানে ব্যথা, অস্বস্তি বা ফোলাভাব যকৃতের প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশনের ইঙ্গিত হতে পারে। কখনও সেখানে অতিরিক্ত পানি জমে পেট ফেঁপে যেতে পারে—যাকে বলা হয় অ্যাসাইটিস। অনেকেই ভুল করে একে গ্যাস্ট্রিক বা বদহজম ভাবেন।
৩. চোখ বা ত্বকে হলুদাভ ভাব (জন্ডিস)
চোখের সাদা অংশ বা ত্বকে হালকা হলুদ ভাব দেখা গেলে সাবধান হোন। এটি জন্ডিসের লক্ষণ। যখন যকৃত বিলিরুবিন নামক পদার্থ সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না, তখন এই হলুদভাব দেখা দেয়। অনেক সময় হালকা জন্ডিসকে রোদে পোড়া ভাব বলে ভুল করা হয়।
৪. চুলকানি বা ত্বকে অস্বস্তি
হাত-পা বা পুরো শরীরে অকারণ চুলকানি হলে, তা যকৃতের সমস্যার কারণেও হতে পারে। যখন যকৃত বাইল সল্ট ঠিকমতো ফিল্টার করতে পারে না, তখন তা রক্তে জমে গিয়ে ত্বকে চুলকানি তৈরি করে। লোকে একে শুকনো ত্বক বা অ্যালার্জি বলে ভুল করে।
৫. প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যাওয়া
যথেষ্ট পানি পান করার পরেও যদি প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ বা বাদামি হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা রয়েছে। এটা দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত বিলিরুবিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হলে। জন্ডিসের সাথে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
৬. অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া
কোনো কারণ ছাড়াই যদি ওজন দ্রুত কমে যায়, তা যকৃতের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। যকৃত ভালোভাবে পুষ্টি গ্রহণ করতে না পারলে হজমে বিঘ্ন ঘটে ও ক্ষুধা কমে যায়। অনেকে একে ইতিবাচক ভাবলেও, দ্রুত ও অকারণ ওজন কমা কখনোই স্বাভাবিক নয়।
৭. মল-এর রঙ পরিবর্তন
যদি মলের রং ধূসর, সাদা বা কাদামাটির মতো হয়, বুঝতে হবে যকৃত থেকে বাইল ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে না বা বাইল ডাক্ট ব্লক হয়ে আছে। আবার কখনও অতিরিক্ত গাঢ় বা তার মতো কালো মল অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ইঙ্গিত দিতে পারে। এটি ভয়াবহ হতে পারে।
প্রতিটি মানুষকেই উচিত শরীরের এই ক্ষীণ সংকেতগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। কারণ সময়মতো ধরা পড়লে যকৃতের অনেক রোগ প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মুমু ২