ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজবাড়ীতে ঈদ বকশিশের নামে চাঁদাবাজি

শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজবাড়ী 

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ১২ জুন ২০২৫

রাজবাড়ীতে ঈদ বকশিশের নামে চাঁদাবাজি

ছবি: জনকন্ঠ

ঈদের আনন্দে বুকভরা হাসি নিয়ে পরিবার-পরিজনের সাথে বাড়ি ফিরেছিল কর্মজীবী মানুষ। কিন্তু ঈদের ছুটির ৭ দিন আগে শুরু হওয়া অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার ‘ঈদ বকশিশ’ আজও শেষ হয়নি। ঈদ বকশিশের ভোগান্তিতে কর্মমুখী সাধারণ যাত্রী এবং স্বাভাবিক চলাচলকারী যাত্রীরা।

খোঁজ নিয়ে এবং সরেজমিন গিয়ে যাত্রী ও চালকদের জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফরিদপুর, রাজবাড়ী সদর, কালুখালী পাংশা, মধুখালী, মাগুরা সহ বিভিন্ন জায়গা পর্যন্ত চলাচলকারী সিএনজি, অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, থ্রি-হুইলার ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকরা এখনো যাত্রীদের কাছ থেকে পূর্বনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন।

দৌলতদিয়া বাসটার্মিনাল থেকে ফরিদপুর ডিসি অফিসের সামনে পর্যন্ত সিএনজি সাধারণত ভাড়া ৮০ টাকা হলেও ঈদের সাতদিন আগে থেকেই চালকরা ১০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। ঈদের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সেই অতিরিক্ত ২০ টাকা ভাড়া এখনো যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে চালকদের সাথে কথা বললে তারা সাফ জানান, “ভাই, ঈদের সময় একটু বকশিশ নিই। সবারই তো কিছু না কিছু পাওয়া উচিত।” তবে প্রশ্ন ওঠে, ঈদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এই ‘বকশিশ’ কতদিন চলবে? চালকদের উত্তর ছিল, "এটি শুধু ঈদের যাত্রীদের জন্য, তবে আমরা একাধিকবার বসে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছি যে, ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণ রেখে দিব। তবে কোনো বাধা না আসলে।”

ভাড়া বৃদ্ধি কিভাবে এবং কার নির্দেশে বৃদ্ধি করা হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, “আমরা নিজেদের মধ্যে নির্ধারণ করি। এর জন্য কারো নির্দেশ বা পরামর্শ নেওয়া হয় না।”

অন্যদিকে যাত্রীরা বলছেন ভিন্ন কথা। ভুক্তভোগী এক দিনমজুর যাত্রী জানান, “আমরা ছোট চাকরি করি। ঈদের বোনাস পাই না, আবার যারা পায় তাও একবারে। চালকরা ১৫ দিন ধরে শুধু ঈদের নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। এটা তো জুলুম।”

আয়শা নামের এক যাত্রী দৌলতদিয়া ঘাট বাস টার্মিনাল থেকে মেয়ে নিয়ে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি বলেন, “প্রতিনিয়ত ৮০ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্ত আজ ১০০ টাকা চাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ঈদ বকশিশ কতদিন দিব? ঈদের ৭ দিন আগে থেকে ঈদ বকশিশ দেওয়া শুরু হয়েছে আবার ঈদের ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও ঈদ বকশিশ নেওয়া শেষ হয়নি।”

অন্তর নামের এক যাত্রী ফরিদপুর থেকে সিএনজিতে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছেন। তিনি বলেন, “ঈদ বকশিশ আর কত দিব? আজও যানবাহন চালকগণ ঈদ বকশিশ নিচ্ছে। শুধু চাচ্ছে না, রীতিমত বাধ্য করছেন। আমরা যে কর্ম করি সেখানে ঈদ বকশিশ মাত্র একবার দেওয়া হয়। আর আমরা পটানা ১৫ দিন যাবৎ ঈদ বকশিশ দিচ্ছি। তিনি বলেন, এটা রীতিমত নিরব চাঁদাবাজি। এমন অভ্যাস থেকে পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।”

এদিকে চালকদের সাথে এই ঈদ বকশিশ বা বাড়তি ভাড়া নিয়ে অনেক সময় বাকবিতণ্ডাও হচ্ছে যাত্রীদের। কেউ কেউ প্রতিবাদ করছেন, কেউ কেউ নিরবে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে।

এমন অবস্থায় রাজবাড়ী জেলায় অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের এই অনিয়ম রোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন স্থানীয়রা। ঈদ বকশিশের নামে ‘চাঁদাবাজি’। “ঈদের নাম করে গরিব যাত্রীদের পকেট কাঁটার এই সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া জরুরি। ঈদের আনন্দ যেন কারো জন্য বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়।”

উল্লেখ্য, রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রায় ২ হাজার সিএনজি, অটোরিক্সা, মাহিন্দ্র, থ্রি-হুইলা, ব্যাটারি চালিত, নসিমন-কমিন সহ ছোট ছোট বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নিয়মিত চলাচল করে।

শহীদ

×