
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
রাঙামাটির পাহাড়ের আম এখন বাজারে। তবে এবার ফলন কম হয়েছে। শুরুতে গাছে প্রচুর মুকুল এলেও পরে তীব্র দাবদাহের কারণে মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রাঙামাটিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমের ফলন তেমন ভালো হয়নি বলে জানান বাগানি ও কৃষিবিদরা। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বাগানিরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মৌসুমে আমের অর্ধেক ফলন মেলেনি। দাম ভালো পাওয়া গেলেও বাগানে উৎপাদন নেই। অনেকের লোকসানও গুনতে হবে। রাঙামাটিতে ইতোমধ্যে দেশি ও রুপালি জাতের আম বাজারে এসেছে। আম্রপালি, রাংগুয়াই জাতের আমও আসতে শুরু করেছে।
পাহাড়ে উৎপাদিত আম্রপালি ও রাংগুয়াই জাতের আম টসটসে ও রসালো। স্বাদে খুব মিষ্টি; কিন্তু এবার মৌসুমে এসব আমের ফলন খুব কম। বর্তমানে আম্রপালি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায় এবং রাংগুয়াই আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৬০ টাকায়।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের রেজাউল করিম জানান, তার ২৫ একর বাগানে আম্রপালি জাতের আমের গাছ আছে; কিন্তু এ বছর আশানুরূপ ফলন না হওয়ায় তিনি হতাশ।
তিনি বলেন, আগের বছরগুলোতে আমের মৌসুমে তার বাগানে গড়ে ৫০-৬০ টন আম্রপালি আমের ফলন পেতেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে বাজারজাত হয়ে যেত তার বাগানের আম। কিন্তু এ বছর তার বাগানে ৫-৭ টন আমও হবে না। তাই তাকে এ বছর যথেষ্ট লোকসান গুনতে হবে।
আম্রপালি আমের ফলন নিয়ে একই অবস্থার কথা জানিয়েছেন ওই ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকার দুই একরের আম বাগান মালিক রবিউল ইসলাম।
এ বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই এলাকায় আম্রপালি আমের ফলন হ্রাস পেয়েছে বলে জানান লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলার লংগদু উপজেলার মাইনী ইউনিয়নের সবুজ মিয়া জানান, মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল দেখা গেলেও তীব্র খরতাপের কারণে মুকুল নষ্ট হয়ে ঝরে গেছে। ফলে এ বছর বাগানে আম্রপালি আমের ফলন তেমন সুবিধাজনক হয়নি। আগের বছরগুলোয় প্রতি মৌসুমে লাখের অধিক টাকার আম বিক্রি করেছেন; কিন্তু এ বছর অর্ধেক ফলনও নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, সদরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় আমের বিস্তর চাষাবাদ হচ্ছে। এবারের মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জেলায় ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রতি হেক্টরে ১২ টন; কিন্তু এবার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জেলায় আমের ফলন হয়নি। তবে ঘূর্ণিঝড় বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমের তেমন কোনো ক্ষতিও হয়নি।
তিনি আরও জানান, এর আগে প্রতিটি মৌসুমে জেলায় অন্তত ২০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হতো। এ জেলায় দেশি জাতের আমসহ আম্রপালি, রুপালি, ফজলি, ল্যাংড়া, রাংগুয়াই জাতের আম চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
মিরাজ খান