ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় ভিটামিন ডি-র ঘাটতি? যা বলছে বিজ্ঞান

প্রকাশিত: ১৩:৪৩, ১০ জুন ২০২৫

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় ভিটামিন ডি-র ঘাটতি? যা বলছে বিজ্ঞান

বিশ্বজুড়ে হৃদরোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগজনিত কারণে, যা বৈশ্বিক মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। হৃদরোগ, বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাকের পেছনে বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ভিটামিন ডি-র ঘাটতির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। তবে সত্যিই কি ভিটামিন ডি-র ঘাটতির সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের কোনও সম্পর্ক আছে? চলুন খতিয়ে দেখা যাক।

ভিটামিন ডি কী?
ভিটামিন ডি, যাকে ‘সানশাইন ভিটামিন’ও বলা হয়, একটি চর্বিতে দ্রবণীয় পুষ্টি উপাদান। এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি, পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সূর্যের আলো থেকে এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরে তৈরি হয়। এছাড়াও কিছু খাবার যেমন তেলযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, মাশরুম, এবং ফোর্টিফায়েড দুধ বা সিরিয়ালের মতো পণ্য থেকে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। তবে অনেক উন্নত দেশে সূর্যরশ্মির কম উপস্থিতি বা ত্বকের গাঢ় রঙের কারণে মানুষের মধ্যে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি দেখা যায়।

হার্ট অ্যাটাক ও ভিটামিন ডি-র ঘাটতির সম্পর্ক
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে ভিটামিন ডি-র মাত্রা কম, তাদের মধ্যে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা অন্যান্য হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। যদিও পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণাগুলোতে এ সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তবু নিয়ন্ত্রিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এমন কোনও নিশ্চিত প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি যে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট হৃদরোগ ঠেকাতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ান গবেষণা যা নতুন আশার ইঙ্গিত দেয়
২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় একটি বড় পরিসরের ট্রায়াল পরিচালিত হয়। এতে ৬০ থেকে ৮৪ বছর বয়সি ২১,৩১৫ জন অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে একদলকে প্রতি মাসে ৬০,০০০ IU ভিটামিন ডি এবং অন্য দলকে প্লাসেবো দেওয়া হয়। পাঁচ বছর ধরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।

ফলাফলে দেখা গেছে, যারা ভিটামিন ডি নিয়মিত গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে হৃদরোগজনিত বড় ধরনের ঘটনা ৯ শতাংশ কমেছে। হার্ট অ্যাটাকের হার ১৯ শতাংশ এবং করোনারি রিভাসকুলারাইজেশনের (হার্টে রক্তপ্রবাহ পুনঃস্থাপনের চিকিৎসা) হার ১১ শতাংশ কম ছিল। তবে স্ট্রোকের ক্ষেত্রে কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়নি। গবেষকেরা বলেন, যাঁরা শুরু থেকেই স্ট্যাটিন বা অন্য হৃদরোগের ওষুধ গ্রহণ করতেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সুরক্ষামূলক প্রভাব আরও বেশি হতে পারে।

কালো ত্বক ও সূর্যরশ্মির ঘাটতিতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ
২০২১ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশেষ করে গাঢ় ত্বকের মানুষদের মধ্যে যাঁরা সূর্যের আলো কম পান, তাঁদের ভিটামিন ডি-র ঘাটতির কারণে রক্তনালীর কার্যকারিতা কমে, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণাটি বলছে, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টেশন নিরাপদ এবং কার্যকর একটি উপায় হতে পারে, বিশেষ করে তরুণদের জন্য, যারা আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ হলেও ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।

তবে ভিটামিন ডি সবসময় সমাধান নয়
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ২০১৯ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি গ্রহণ করলেও হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে না। গবেষকেরা বলছেন, “আমরা ভেবেছিলাম অন্তত সামান্য উপকার পাওয়া যাবে, কিন্তু সেটাও দেখা যায়নি।” তাই তারা সরাসরি মত দেন, শুধুমাত্র হৃদরোগ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত নয়।

তাহলে করণীয় কী?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH) অনুযায়ী, ১ থেকে ৭০ বছর বয়সিদের প্রতিদিন ৬০০ IU এবং ৭১ বছর বা তার বেশি বয়সিদের ৮০০ IU ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত, মূলত খাদ্য থেকেই। অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, এমনকি কিডনিতে পাথরও হতে পারে।

প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি পেতে সূর্যের আলোতে কিছুটা সময় কাটানো ভালো। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন সামুদ্রিক তেলযুক্ত মাছ, দুধ, সিরিয়াল ও কিছু বিশেষ ধরনের মাশরুম। তবে কোনও ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


ভিটামিন ডি-র ঘাটতির সঙ্গে হৃদরোগের যোগসূত্র নিয়ে গবেষণা এখনও চলমান। কিছু গবেষণা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিলেও, এটি একমাত্র প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শই হতে পারে হৃদরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর পথ।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/mrym24d5

আফরোজা

×