ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বহু বছর পর রহস্য ফাঁস: পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে উঠছে মূল্যবান সোনা

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ১১ জুন ২০২৫

বহু বছর পর রহস্য ফাঁস: পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে উঠছে মূল্যবান সোনা

ছবি: সংগৃহীত

সম্পদ ও ক্ষমতার প্রতীক সোনা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রে। তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কার জানাচ্ছে, মাটির গভীর থেকে ধীরে ধীরে পৃথিবীর পৃষ্ঠের দিকে উঠে আসছে সোনার গোপন ভাণ্ডার। যখন বিশ্ববাজারে সোনার দাম আকাশছোঁয়া, তখন এই তথ্য নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর।

পৃথিবীর গোপন সোনা উন্মোচনের পথে
জার্মান ভূতত্ত্ববিদ নিলস মেসলিং ও তার দল আবিষ্কার করেছেন যে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ক্রমাগত সোনা ও অন্যান্য ধাতব উপাদান ভূত্বকের দিকে উঠে আসছে। হাওয়াইয়ের আগ্নেয়গিরির শিলার নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ গবেষণা চালানো হয়, যা পুরনো বিশ্বাস—পৃথিবীর তরল কেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে আলাদা ও বিচ্ছিন্ন—তাকে ভুল প্রমাণ করেছে।

মেসলিং জানান, “আমাদের গবেষণা পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে যে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ম্যান্টলে উপাদান স্থানান্তর ঘটে।” এ প্রক্রিয়া বোঝায়, পৃথিবীর কেন্দ্র কোনো স্থির ও আলাদা কাঠামো নয় বরং এক চলমান, অংশীদার সত্তা, যা তার সম্পদ শেয়ার করে। গবেষণায় উঠে এসেছে, পৃথিবীর প্রায় সব সোনাই কেন্দ্রের গভীরে অবস্থান করে, তবে ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় এর সামান্য অংশ উপরের দিকে উঠে আসে।

ম্যান্টলের উত্তোলনের পেছনের বিজ্ঞান
পৃথিবীর কেন্দ্র-ম্যান্টল সীমারেখায় নিরবচ্ছিন্ন গলিত স্রোত প্রচণ্ড উত্তাপে উত্তোলন করে ভূত্বকের দিকে অনেক পরিমাণে ম্যান্টলের পদার্থ। গ্যোটিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাথিয়াস উইলবোল্ড বলেন, “এই উত্তোলনের ফলে হাওয়াইয়ের মতো মহাসাগরীয় দ্বীপসহ বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক গঠন তৈরি হয়।”

এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া একক নয়, বরং এতে আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাত ও ম্যান্টলের গভীর থেকে উঠে আসা উত্তপ্ত শিলা প্রবাহ—যাকে ম্যান্টল প্লুম বলা হয়—এর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ ধরনের তাপ-নির্ভর গতিশীল বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদি বিবর্তন সম্পর্কিত আমাদের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়।

হাওয়াই ভ্রমণের সময় আমার পরিবারের সাথে আগ্নেয়গিরির অপরূপ দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। তখন বুঝিনি যে, আমার পায়ের নিচে একটি প্রাচীন গাথা চলমান—পৃথিবীর কেন্দ্র ধীরে ধীরে ভূত্বককে সোনায় সমৃদ্ধ করছে, অদৃশ্য পথে উঠে আসছে মূল্যবান ধাতু।

ভবিষ্যতের সোনা অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত
তবে এই উত্তেজনাপূর্ণ আবিষ্কারের পরও বাস্তব জটিলতা রয়েছে। পৃথিবীর কেন্দ্র-ম্যান্টল সীমারেখা পর্যন্ত খনন করা প্রায় অসম্ভব। এ পর্যন্ত সবচেয়ে গভীর খনন মাত্র ৭.৬ মাইল পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে।

এই দূরত্বেই বোঝা যায়, প্রকৃত সোনার খনি এখনো অনেক দূরের স্বপ্ন। মাটির এত গভীরে থাকা ধাতু উত্তোলন করা এখনো সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্য।

এই গবেষণা আমাদের ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়। বিজ্ঞানী ও উৎসাহী মানুষের মাঝে সৃষ্টি করছে নতুন কৌতূহল। যদিও এখনই আমরা পৃথিবীর কেন্দ্র স্পর্শ করতে পারছি না, তবুও এই ভাবনাই আমাদের বিস্ময়ে ভরিয়ে তোলে—পৃথিবী কি তার লুকিয়ে রাখা সম্পদ একে একে তুলে দিচ্ছে আমাদের হাতে?

আবির

×