ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নদী নয়, এখন কচুরিপানার বন, মৃতপ্রায় শাখা ধনাগোদা নদী

সুমন আহমেদ, মতলব, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ১২ জুন ২০২৫

নদী নয়, এখন কচুরিপানার বন, মৃতপ্রায় শাখা ধনাগোদা নদী

এক সময়ের খরস্রোতা শাখা ধনাগোদা নদী এখন মৃত্যুপ্রায়। পানির প্রবাহ নেই, নেই নৌযান কিংবা মাছের আনাগোনা। কচুরিপানা, শেওলা আর দুর্গন্ধে ভরে গেছে নদীর বুক। অথচ নদীটি একসময় মতলব উত্তরের প্রাণ ছিল, ছিল হাজারো মানুষের জীবিকার উৎস। এখন এটি যেন এলাকাবাসীর জীবনে এক অভিশাপ। এক সময় এই নদীতে পালতোলা নৌকা চলত, মাছের নৌকা ভিড় করত, শিশুরা সাঁতার কাটত। আজ সেসব দৃশ্য অতীত। সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর একফোঁটা পানিও খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না, সব কিছু ঢেকে গেছে ঘন কচুরিপানায়।

উপজেলার নয়াকান্দির ৭৮ বছর বয়সী রুহুল আমিন মিয়াজী বলেন, ৯০ সাল পর্যন্ত বড় বড় নৌকা চলত এই নদীতে। এখন কচুরিপানার কারণে একফোঁটা পানিও নড়ে না। দূষণের কারণে কিছুই করা যায় না এই পানি দিয়ে। লুধুয়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, এই নদী ছিল আমাদের জীবিকা। হাজারো জেলে মাছ ধরে সংসার চালাত। এখন নদীও নেই, মাছও নেই। বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি জমে, কিন্তু নদী তা নিতে পারে না। এখন এটা আমাদের জন্য অভিশাপ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাখা ধনাগোদা নদীসহ মতলব উত্তরের বিভিন্ন খাল খননের জন্য সরকারিভাবে টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজের অগ্রগতি নেই। ঠিকাদাররা নিয়মবহির্ভূতভাবে ছোট ছোট শাখা খাল খননের কাজ করছে, যেখানে মূল নদী ও বড় খালগুলোর কাজ এখনো শুরু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, মূল নদী পরিষ্কার না করেই ঠিকাদাররা বিল উত্তোলনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

পরিবেশবিদ ও জলজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগভীর, ব্যারিকেডবেষ্টিত নদীগুলোতে কচুরিপানার বিস্তার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে। যদি দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে শাখা ধনাগোদা নদী পুরোপুরি মৃত হয়ে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পানি  উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, কাজের নামে কাগজে-কলমে অগ্রগতি দেখিয়ে বিল উঠানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অথচ বাস্তব চিত্র ভয়াবহ।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সাহেদ বলেন, শাখা ধনাগোদা নদী খননের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নে সময় লাগছে ঠিকই, তবে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। যথাযথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে।

একটি নদীকে মরতে দেখছে মতলব উত্তর। প্রকল্প আছে, অর্থ বরাদ্দ হয় কিন্তু মাঠে কাজ হয় না। নদী শুধু একটি জলাধার নয়, এটি একটি জনপদের জীবনরেখা। এই মৃত্যু থামাতে হলে প্রয়োজন সদিচ্ছা, জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছ বাস্তবায়ন। তা না হলে শাখা ধনাগোদা নদী হয়ে উঠবে সরকারের অব্যবস্থাপনার নিদর্শন।

আঁখি

×