
ছবি: সংগৃহীত প্রতীকী ছবি
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামির ঘোষণায় আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। রাশিয়া ইরানে আটটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করবে বলে জানানো হয়েছে। এই ঘোষণা ইরানের জ্বালানি খাতের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
ইরানের বুশেহরে রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ইতিমধ্যে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এবার সেই সহযোগিতার সম্প্রসারণ ঘটতে যাচ্ছে। রাশিয়ার রোসাটম কোম্পানি এই প্রকল্পগুলোতে তাদের সর্বাধুনিক ও নিরাপদ পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহ করবে। ইরানের বিভিন্ন কৌশলগত অবস্থানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পেছনে ইরানের কয়েকটি স্পষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। প্রথমত, দেশটির ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো। দ্বিতীয়ত, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা। তৃতীয়ত, জ্বালানি খাতে বৈচিত্র্য আনা। ইরানের কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।
তবে এই ঘোষণা পশ্চিমা দেশগুলো কীভাবে নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগ রয়েছে। নতুন এই প্রকল্প ইরান-রাশিয়া সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের কৌশলগত জোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রকল্পের সময়সীমা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু হবে। তবে আটটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এই সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং প্রযুক্তি সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রকল্পের অগ্রগতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
ইরানের জন্য এই প্রকল্পটি যেমন জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি রাশিয়ার জন্যও এটি একটি কৌশলগত অর্জন। মধ্য প্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রকল্পগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, ইরানও চায় পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে চ্যালেঞ্জও কম নয়। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত জটিলতা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগগুলো প্রকল্পের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তবে ইরান ও রাশিয়া উভয় দেশই তাদের পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, পশ্চিমা বিশ্ব এই ঘোষণাকে কীভাবে গ্রহণ করবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ইরানের জ্বালানি খাতে নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
সূত্র: Greater Kashmi.com
সাব্বির